কাজিরবাজার ডেস্ক :
আখেরি মোনাজাতে গোটা মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে টঙ্গীর তুরাগতীরে গতকাল রবিবার শেষ হয়েছে ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তায় তাবলিগ জামাত আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ইজতেমার এ মোনাজাতে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষের ঢল নামে। ভারতের মাওলানা সা’দের পরিচালনায় বেলা সোয়া ১১টা থেকে আধা ঘণ্টাব্যাপী এ মোনাজাতে সবাই দুই হাত তুলে ‘আমিন’ ধ্বনিতে মুখর করে তোলেন ওই এলাকা। টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত মোনাজাতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও শরিক হন অনেকে।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ অবস্থায় গুলশানে নিজ কার্যালয়ে বসে মোনাজাতে শরিক হন। মোনাজাতে অংশ নিতে বিশ্ব ইজতেমা মাঠে উপস্থিত হন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, স্থানীয় এমপি জাহিদ হোসেন রাসেলসহ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন ইসলামী দেশের কূটনীতিক।
দেশের উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিএনপি জোটের অবরোধ উপেক্ষা করে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ইজতেমায় যোগ দেন তাবলিগ অনুসারী ও ধর্মপ্রাণ লাখ লাখ মানুষ। আয়োজকরা জানান, প্রথম পর্বের এ ইজতেমায় ৮২টি দেশের প্রায় সাড়ে ৯ হাজার বিদেশি অতিথিসহ ২০ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ আখেরি মোনাজাতে শরিক হন।
এদিকে অধিক সওয়াব ও গোনাহ মাফের কাক্সিক্ষত এ মোনাজাতে অংশ নিতে রবিবার ভোর থেকে ঢাকা ও গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকা থেকে টঙ্গীতে আসতে থাকেন মুসল্লিরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পক্ষে মধ্যরাত থেকেই টঙ্গীর আশপাশের সব সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পথ হেঁটে অনেকেই ইজতেমাস্থলে পৌঁছেন। সকাল ৮টার আগেই ইজতেমার মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পরে অনেক মুসল্লি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া সড়কে অবস্থান নেন। আখেরি মোনাজাতের জন্য মুসল্লিরা জায়নামাজ, খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে বসে পড়েন। আশপাশের ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাসাবাড়ি, কলকারখানা, অফিস, দোকান, যানবাহনের ছাদ এবং তুরাগে নৌকায় অবস্থান নেন অনেক মুসল্লি। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস ছিল ছুটি। ঢাকার সরকারি-বেসরকারি অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট অনেকে অঘোষিত ছুটি নিয়ে যোগ দেন আখেরি মোনাজাতে।
আখেরি মোনাজাতে যা বলা হয় : মোনাজাতে আরবি ও উর্দুতে দোয়া করেন মাওলানা সা’দ। এ সময় তিনি বলেন, হে আল্লাহ সব মুসলমানের হেদায়েত নসিব কর। সারা বিশ্বে শান্তি বর্ষিত কর। সব তাবলিগওয়ালাকে কবুল কর। মুসলমানদের হেফাজত কর। ইজতেমা আয়োজনকারীদের কবুল কর। তাদের বেহেশত নসিব কর। হে আল্লাহ, সবাইকে ঈমানদার বানিয়ে দাও। ইসলামের দাওয়াতকারীদের কবুল কর। আমাদের সবাইকে মাফ করে দাও। পৃথিবীর সব নাস্তিক্যবাদীদের হেদায়েত কর ইত্যাদি। এর আগে বাদ ফজর থেকে ঈমান, আমল ও আখলাখের ওপর গুরুত্ব দিয়ে হেদায়েতি বয়ান করেন মাওলানা সা’দ। ইজতেমা শেষে কয়েক হাজার জামাত দেশের বিভিন্ন স্থানে দাওয়াতি কাজে বের হন।
১০ মুসল্লির মৃত্যু : বিশ্ব ইজতেমায় শরিক হয়ে প্রথম পর্বে চার দিনে বিভিন্ন রোগজনিত কারণে ১০ মুসল্লি মারা গেছেন। শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত চার মুসল্লি মারা যায়। এর আগে আরও ছয় মুসল্লির মৃত্যু হয়।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা : ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল র্যাব ও পুলিশ। ওয়াচ টাওয়ার, আকাশ ও নদীপথে টহল, মাঠসহ আশপাশের এলাকায় ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সংখ্যক সদস্য নিয়োজিত ছিল। ইজতেমা ময়দানের ১৭টি প্রবেশপথে র্যাব পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল তাবলিগের লাঠিয়াল বাহিনী। প্রথম পর্বে ৪০ খিত্তায় ৩২ জেলার মুসল্লির অবস্থানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। বিদেশিদের জন্য ছিল আলাদা ব্যবস্থা।