হার্ডলাইনে সরকার ॥ বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দিলে হরতাল সহ কঠোর কর্মসূচি

35

image_8_453_47864কাজিরবাজার ডেস্ক :
৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এদিন ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করবে।
এমন প্রেক্ষাপটে বিরোধী জোটের আন্দোলন কঠোর হস্তে মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এজন্য জানুয়ারির শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য সংগঠনকে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছে দলীয় হাইকমাণ্ড। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন মোকাবেলার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করছেন দলটির নেতারা।
সূত্রমতে, ৫ জানুয়ারি বিরোধী দলের কর্মসূচি মোকাবেলায় হার্ডলাইনে থাকবে সরকার। আন্দোলন মোকাবিলায় প্রশাসনিক যন্ত্রকেই বেশি ব্যবহার করা হবে। সেই জন্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা পুরোনো মামলাগুলো সচল এবং একই সঙ্গে নতুন করে মামলাও দেওয়া হতে পারে। এরই মধ্যে ধরপাকড়ের প্রাক-প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ মামলায় তারেক রহমানও আসামী। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সাজা পেলে বিএনপি নেতারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যেতে পারেন।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, বিরোধী দলের আন্দোলনের হুমকি বিবেচনায় নিয়ে সাংগঠনিকভাবে রাজপথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। আন্দোলনের মাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এরই মধ্যে আগাম দলীয় কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ দিবস হিসেবে পালন করবে দলটি। এদিন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরপর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে বড় রকমের জমায়েত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মন্ত্রণালয় ভিত্তিক নানা কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারদলীয় কর্মীদের রাজপথে সক্রিয় রাখা হবে।
এ দিন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটও একই স্থানে জনসভা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মহাসমাবেশ সফল করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে। ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে রাজধানীর প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রাক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সূত্রমতে, ৫ জানুয়ারি প্রত্যেক মন্ত্রী-এমপিকে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের নেতাদেরও কেন্দ্র থেকে সর্তকতামূলক নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। একইভাবে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। যেসব এলাকায় বেশি সহিংসতা হয়- বিশেষ করে সীমান্ত এলাকাগুলোতে বাড়তি সতর্কতা থাকতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, আমাদের প্রস্তুতি ব্যাপক। এ দিনটি উৎসবমুখরভাবে পালন করবো। এজন্য মহানগরের সকল থানা ওয়ার্ড পর্যায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘আগামী ৫ জানুয়ারি সরকারের প্রথম বর্ষ উপলক্ষে রাজধানীতে মহাসমাবেশ করা হবে। ওই দিন রাজধানীতে জনস্রোত নামিয়ে বিএনপির আন্দোলন হুমকির জবাব দেওয়া হবে।
এদিকে ৩ ও ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে না দিলে হরতাল কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলের বেশ কয়েকজন জেষ্ঠ্য নেতার সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিএনপি আগামী ৩ ও ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৫ জানুয়ারিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস ও কালো দিন হিসেবে পালন করবে তারা। ইতোমধ্যে ডিএমপি ও গণপূর্ত  অধিদপ্তরে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে দলটি। আবেদনে স্থান হিসেবে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বর, নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই তিন জায়গার যেকোনো জায়গায় সমাবেশ করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু সরকার যদি শেষমেষ সমাবেশ করার অনুমতি না দেয় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাবে বিএনপি।
বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি সমাবেশকে সফল করতে ২১ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা মহানগরসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনগুলোর সাথে বৈঠক করেছেন।bnp logo_47852_0
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ ও এর আগে ৩ জানুয়ারির সমাবেশ সফল করতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে সমাবেশের অনুমতি না দেয়া হলে হরতালসহ বৃহত্তর কর্মসূচির সিদ্ধান্তের কথা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের জানিয়েছেন। সেইভাবে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
৫ জানুয়ারি সমাবেশে প্রধান অথিতি হিসাবে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। একই সাথে সমাবেশ থেকে বেগম জিয়া জনসম্পৃক্তমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন বলে বিএনপির হাইকমান্ড সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে অহিংস কর্মসূচিও ঘোষণার কথা রয়েছে। এই বিষয়ে ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নিবেন।
তাদের দাবি, গত ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এই দিনটি বিএনপি কালো দিবস ও গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে মিছিল-মিটিং ও সমাবেশ করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে বিএনপি ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করবে। এর আগে সরকার বিরোধী আন্দোলনের বার্তা হিসাবে ৩ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশ করার কথা রয়েছে। কিন্তু সরকার যদি ৫ জানুয়ারি সমাবেশের অনুমতি না দেয় তাহলে বিএনপি হরতালসহ বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, আগামী ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে বিএনপি ঢাকায় সমাবেশ করবে। ওই সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়া জনসম্পৃক্তমূলক কর্মসূচির ঘোষণা করবে। আর ওই কর্মসূচি হবে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন। তবে সেই কর্মসূচি কি হবে তা এখনও আলোচনাধীন রয়েছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান বলেন,  ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। তাই ওই দিনে বিএনপি সমাবেশ ও মিছিল-মিটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর ওই দিনেই সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। কিন্তু এখনই বলা যাচ্ছে না সেই কর্মসূচি কি হতে পারে।
জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি ৫ জানুয়ারির দিনটি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে পালন করবে। আর ৫ জানুয়ারি সরকারের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তবে সেই কর্মসূচি কি হবে তা এখনও নিশ্চিত করা বলা যাচ্ছে না। কারণ এই বিষয়ে জোট নেতাদের সঙ্গে এখনও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে ২ জানুয়ারি রাজধানী সোহরাওয়ার্দী উদ্যাগে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র সমাবেশ করবে সংগঠনটি। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্যে রাখার কথা রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার।
এই বিষয়ে ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান বলেন, ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা ডিএমপির কাছে ১ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু বিশেষ কারণে প্রশাসন ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। তাই ছাত্রদল আবার ২ জানুয়ারি সমাবেশের জন্য আবেদন করেছে। আমরা আশা করছি এবার আমাদেরকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে।