স্টাফ রিপোর্টার :
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত পুনর্নির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় এ শহীদ মিনার উদ্বোধন থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য ‘শক্রপক্ষে’র প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাঙালির মৌলিক চেতনা-মূল্যবোধকে কোন বদমায়েশ-দুষ্টলোক প্রতিরোধ করতে পারবে না। তিনি বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তিদের উত্তরসূরীরা আমাদের প্রাণের শহীদ মিনারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। ওরা পরাজিত শক্তি। তারা জানে না বিজয়ী জাতিকে রুখে দেয়া যায় না।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে সিসিকের মেয়র থাকা অবস্থায় কামরানের উদার সহযোগীতা আর বিএমএ’র সহ-সভাপতি ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলালসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা এই অপরূপ শহীদ মিনার পুনঃনির্মাণ করেছি। আমাদের চেতনা সমুজ্জ্বল থাকবে সর্বদা। কোনো পরাজিত শক্তির কাছে আমরা মাথানত করবো না।
তিনি বলেন, একুশ মানে মাথা নত না করা। সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের ভাষার অধিকার অর্জন করেছি। একুশকে অর্জন করেছি। সেই একুশ চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। অর্থমন্ত্রী ভাষা আন্দোলনের সাথে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উল্লেখ করে আরো বলেন, ১৯৪৭ সালে স্কুলে পড়া অবস্থায় আমি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যোগদান করি। সিলেটে মুসলিম সাহিত্য সংসদ থেকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুরু হয়। এ আন্দোলন ১৯৫৫ সালে শেষ হয়। ১৯৫৬ সালে বাংলা আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি লাভ করে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে তাকে কয়েক মাস সরকারের ভাত খেয়ে হয়েছে(জেল খাটা) বলে মন্তব্য করেন তিনি। আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে ছিলাম। তবে, সরকারি চাকুরি করার সুবাদে সরাসরি সম্মুখ সমরে অংশ নেয়ার সুযোগ হয়নি। তবে, জুন মাস থেকে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কলম-বক্তৃতা সমর চালিয়েছি। তার সম্পূর্ণ চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ আচ্ছন্ন করে রেখেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় শহীদ মিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী বলেন, শহীদ মিনার ভেঙে দিয়ে আমাদের অন্তর থেকে শহীদ মিনারকে সরাতে পারেনি ওরা, পারবেও না।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, আজ একটি চমৎকার দিন। আজকের সন্ধ্যা অসাধারণ। আমার জীবনে এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই শহীদ মিনারের মতো এতো দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার বাংলাদেশে আছে কি না তা আমার জানা নেই। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে মন্ত্রী বলেন, শহীদ মিনার আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এটা আমাদের চেতনা। এই শহীদ মিনারকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
শহীদ মিনার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি সদর উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ও সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সাংসদ মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী, সাংসদ আব্দুল মতিন, মহিলা সাংসদ কেয়া চৌধুরী, আ’লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আ’লীগের সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, জাসদ জেলা সভাপতি কলমদর আলী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, ন্যাপ জেলা সভাপতি আব্দুল হান্নান, ব্যারিষ্টার আরশ আলী, কমরেড সিকন্দর আলী, সাম্যবাদী দলের নেতা ধীরেন সিংহ প্রমুখ।
শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ মিানরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধণ করে র্অথমন্ত্রীসহ অন্যরা। পরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সিলেট সিটি করর্পোরেশন, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ প্রভৃতি সংগঠন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন জাতীয় ও স্থানীয় শিল্পীরা।
এদিকে,এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে গতকাল বুধবার দিনভর ছিল শহীদ মিনারে উৎসুক মানুষের ভিড়। বিকাল সোয়া ৪টায় পতাকা উত্তোলন ও পায়রা উড়িয়ে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয় সুধী সমাবেশ। এরপর চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে।
উল্লেখ্য,এ অঞ্চলের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার হিসেবে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মিত হয় ১৯৮৮ সালে। ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা ও কিছু প্রতিশ্র“তিশীল মানুষের হাত ধরেই বীজ বপীত হয় সেই শহীদ মিনারের। পরবর্তীতে সেই শহীদ মিনারই সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মর্যাদা লাভ করে। গত বছর হেফাজতে ইসলামীর মিছিল থেকে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয় শহীদ মিনারটি। পরে শহীদ মিনার পরিদর্শনে এসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এটি পুনর্নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সিসিক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে অপরূপ নান্দনিকতার সাথে সিলেটীর ঐতিহ্যকে মিশিয়ে নগরীর জিন্দাবাজার-চৌহাট্টায় পুনর্নির্মিত হয় এ শহীদ মিনারটি।