কাজিরবাজার ডেস্ক :
নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত চাকরিচ্যুত র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ এবং অপর দুই কর্মকর্তা সাবেক কোম্পানি কমান্ডার আরিফ হোসেন ও এম এম রানা জড়িত ছিলেন বলে র্যাবের চূড়ান্ত তদন্ত— প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে তারেক সাঈদ ও আরিফ হোসেন অপহরণ থেকে শুরু করে মরদেহ নদীতে ডোবানো পর্যন্ত পুরো ঘটনায় জড়িত থাকলেও এম এম রানা অপহরণ পর্যন্ত আংশিক জড়িত ছিলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত র্যাব সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটির এ প্রতিবেদন গতকাল বুধবার হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। বিচারপতি মোহাম্মদ রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির প্রধান র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডিআইজি আফতাব উদ্দিন।
র্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাত খুনের ঘটনায় প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত (অপহরণ থেকে শুরু করে মরদেহ নদীতে ডোবানো পর্যন্ত) র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ ও কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব.) আরিফ হোসেন সিপিএসসি জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু লে. কমান্ডার (অব.) এম এম রানা অপহরণ পর্যন্ত অংশ নিয়ে আংশিক জড়িত ছিলেন বলে প্রতীয়মান হয়। তবে ঘটনার সঙ্গে র্যাব সদর দপ্তরের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে র্যাব আরো বলেছে, ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণেই কাউন্সিলার নূর হোসেন কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে অপহরণ ও খুনের পরিকল্পনা করেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের ঘটনায় হাইকোর্টে উপস্থাপন করা র্যাবের প্রতিবেদন মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এ বিষয়ে ডিবি যে চার্জশিট দাখিল করবে, তার ভিত্তিতেই মামলার বিচার হবে। তিনি আরো বলেন, এটা র্যাবের বিভাগীয় রিপোর্ট। ৭ খুনের বিষয়ে র্যাবের ভূমিকা কি ছিল তা এ প্রতিবেদনে বের হয়ে এসেছে। গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। ৩০ এপ্রিল ও ১ মে শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের মরদেহ পাওয়া যায়। সাত খুনে জড়িত বলে অভিযোগ আসায় গত ৫ মে বিচারপতি মোহাম্মদ রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দনচন্দ্র ঠাকুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে র্যাব-১১-এর ওই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন এবং র্যাবকে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন। র্যাবের কোনো সাবেক বা বর্তমান সদস্যের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে ওই তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। তারই প্রেক্ষিতে গ্রেফতার হন তারেক সাঈদ, রানা ও আরিফ। এর আগেই তিনজনকে নারায়ণগঞ্জ র্যাব থেকে সরিয়ে এনে সামরিক বাহিনী থেকে অবসরে পাঠানো হয়। হাইকোর্টের নির্দেশে ৮ মে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডিআইজি আফতাব উদ্দিনকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে র্যাব। কমিটির অপর সদস্যরা ছিলেন র্যাব-১০-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার গোলাম সারওয়ার, মেজর মোহাম্মদ সাদিক ও এসপি সাজ্জাদ। কমিটি সাত মাস ধরে তদন্ত চালিয়ে তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছেন। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার আগে তিন দফা অগ্রগতি প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করে সংস্থাটি। র্যাব জানায়, কমিটি এই দীর্ঘ তদন্তকাজে শতাধিক র্যাব কর্মকর্তা ও সদস্যদের সাথে কথা বলে। একই সাথে ঘটনার সাথে জড়িত সাধারণ মানুষ, প্রত্যক্ষদর্শী, ঘটনার শিকার সাতজনের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে। এ ছাড়াও সাতজনকে অপহরণের পর খুন করার আগে সেসব স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় সেগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে তথ্য ও আলামত নিয়েই তার ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন সম্পন্ন করে তদন্ত কমিটি।