‘অলিভ ট্রি’ রেস্টুরেন্ট মাদকসেবী ও অনৈতিক কর্মকান্ডের আস্তানা

186

Untitled-1111স্টাফ রিপোর্টার :
মাদক সেবনকারী ও অনৈতিক কর্মকান্ডের আস্তানা ছিল মহানগর ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ফয়েজ আহমদ পলাশের মালিকানাধীন অলিভ ট্রি রেস্টুরেন্ট। এখানে উঠতি বয়সী ধনীর দুলাল তরুণ-যুবকরা নিরাপদ ভাবে শিসাসেবন করে আসছিল। নগরীর ধোপাদীঘিরপারে অলিভ ট্রি রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠায় স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিকবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত শনিবার রাত ১০ টার দিকে কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি দল অলিভ ট্রি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায়। তখন পুলিশ অভিযানে সেখান থেকে নামী-দামী কিছু যুবক-তরুণদের শিশা সেবনকালে ২৬ ধনীর দুলালকে আটক করে। কিন্তু পুলিশ রহস্যজনক কারনে অলিভ ট্রি রেন্টুরেন্টের মালিক মহানগর ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ফয়েজ আহমদ পলাশ ও রেন্টুরেন্ট মাতিয়ে ৪ ললনা মাহি, শোভা, মিতালি ও নাহিদাকে আটক করেনি। ওইদিন গভীর রাতে কোতোয়ালী থানা পুলিশ উপর মহলের চাপে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়েই বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিতে হয়েছে। যদিও পুলিশ বলছে ঘটনার সাথে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি যে কারনে তাদের অভিভাবকদের ডেকে মুছলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
যুবক-যুবতী ও তরুণদের এ শিশা সেবনকারী প্রতিষ্ঠান অলিভ ট্রি রেন্টুরেন্ট বর্তমানে বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
ছাড়া পাওয়া ধনীর দুলালরা হচ্ছিল- জালালাবাদ আবাসিক এলাকার ৩৫/২ বাসার মাসুকুল হক চৌধুরীর পুত্র তালহা হায়দার চৌধুরী (২৭), উপশহরের এ ব¬কের ৩ নং রোডের আফতাব চৌধুরীর পুত্র মাসুদ চৌধুরী (২৭), চৌকিদেখী রংধনু ১১ আ.হামিদের পুত্র মাসুম আহমদ (২৭),ভার্থখলা  স্বার্ণালী ২০ এর মনির উদ্দিনের পুত্র আবির (২৭), সুবিদবাজার নির্ঝর ২৬ এর সোনা মিয়ার পুত্র ফারুক আহমদ (৩৭), উপশহর জি ব্ল¬কের ৯১ নং বাসার মৃত সামছুন নূরের পুত্র সাহাজ উদ্দিন টিপু (৩৮), মিরাপাড়া এলাকার ১৬৪ নং বাসার আং মুকিতের পুত্র মমিন চৌধুরী (২১), শামীমাবাদ এলাকার ৭নং বাসার আং হাইয়ের পুত্র কুহিনূর আহমদ,  উপশহরের এফ ব্ল¬কের ৬৭ নং বাসার জমির মিয়ার পুত্র জাফর (২১), সুবিদবাজার ৮২/১ এর আং মান্নানের পুত্র রাসেল আহমদ (২৬), দক্ষিণ সুরমার মত সোনা মিয়ার পুত্র ইব্রাহিম খলিল মামুন (২৬), ১২৩ মধুশহীদের কামরুজ্জামানের পুত্র মুন্না (২৬), আম্বরখানা দিগন্ত ৩০ রফিক আহমদের পুত্র আবু মুসা ইমরান আং সানি (৩৪), ঢাকা মগবাজারের সমছু মিয়ার পুত্র জিএম ফারুক (৩৮), পুরান মেডিকেলের দিলীপ রায়ের পুত্র দিবাকর রায় শাওন (২৪), ৬নং তালতলা হাজি আব্দুর রউফের পুত্র শাকিল আহম (২০), ১২৮ মিরাপাড়া সামছুল ইসলামের পুত্র তানজিল (১৯), ২৭ নং ওয়ার্ড গংগানগর এলাকার আং মান্নানের পুত্র মুস্তাক (৩১), কুমিঘাট এলাকার মৃত আখল মিয়ার পুত্র ওয়ারিছ (৫০), চালিবন্দরের ফয়েজ আলীর পুত্র নজরুল ইসলাম (২০), দিগন্ত ৩০ আম্বরখানার মৃত ময়রা মিয়ার পুত্র কিবরিয়া মিনহাজুল হক (৪০), ১১৩ লোহারপাড়া এলাকার আব্দুল আহমদ চৌধুরীর পুত্র তৌহিদ আশফাক (২৮), ১২০/ সি কাজী জালাল উদ্দিন এলাকার আং আহাদের পুত্র আবু রায়হান (২৭), চালিবন্দরের হেলার আহমদের পুত্র সাফেক আহমদ (২১), চালিবন্দরের আকিকুল ইসলামের পুত্র তোফাজুল হোসেন (২৫), একই এলাকার নুরুল ইসলামের পুত্র ফখরুল ইসলাম রুবেল (২২)।
ধোপাদীঘিরপার এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, অলিভ ট্রি’র গোপন কর্মকান্ডের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর গত রবিবার রাতে সওদারটুলা এলাকায় বৈঠক হয়েছে। এতে শিশা সহ মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে এলাকার মানুষ ঐকমত্য প্রকাশ করে। ওদিকে, সিলেটের অলিভ ট্রি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে সিলেটে। সিলেটের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘সীমান্তিক’ আয়োজিত মাদকবিরোধী এক বৈঠকেও এ বিষয়টি আলোচনায় আসে। বৈঠকে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোঃ শহিদুল ইসলাম সহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সাংবাদিকরা অভিযোগ করে বলেন, অলিভ ট্রিতে পুলিশের অভিযানের খবর না ছাপতে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে ওই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা। তবে, বৈঠকে উপস্থিত বক্তারা মাদক রোধে এ রকম প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আটককৃতদের ছাড়িয়ে নিতে ঘটনারদিন থানায় ছুটে যান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ ও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং মাহার স্বত্ত্বাধিকারী ক্রীড়া সংগঠক মাহি উদ্দিন সেলিমসহ সিলেটের বেশ কিছু পরিচিত মুখ। আটককৃতদের মধ্যে এমন বেশ কয়েকজন ছিলেন যারা তাদের নিকটআত্মীয় বলে জানা গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালালেও শেষ পর্যন্ত কোন ফলাফল আসেনি। যে কারনে এ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অলিভ ট্রিতে যাতায়াতকারী কয়েকজন যুবক জানায়, সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই মাহি, শোভা, মিতালি ও নাহিদা নামের চার সীসা কন্যা সেখানে যেতো। প্রতিদিন তারা নতুন নতুন যুবকদের নিয়ে যেতো। ওখানে গিয়ে তারা হারিয়ে যেতো নেশার রাজ্যে। মধ্যরাত পর্যন্ত ওই হোটেলে বসে শিশা সেবনের পর প্রেমিকদের নিয়ে অভিসারে যাওয়া ছিল তাদের নিত্যদিনের রুটিন। প্রেমের ছলে টাকাওয়ালা যুবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতো লাখ লাখ টাকা। অলিভ ট্রিতে যাতায়াতকারী বেশ কয়েক যুবক তাদের হাতে প্রতারিত হয়েছে। তবে মান-সম্মানের ভয়ে কেউ মুখ খোলে নি।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান এ প্রতিবেদককে জানান, অলিভ ট্রি রেস্টুরেন্ট পুনরায় খোলা হয় তাহলে আবার অভিযান চালানো হবে।