৪৪ বছরেও প্রথম মুক্তাঞ্চলের স্বীকৃতি পায়নি জকিগঞ্জ

55

জকিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
আজ একুশে নভেম্বর। দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। একাত্তরের এই দিনে সিলেটের সীমান্ত এলাকা জকিগঞ্জ প্রথম হানাদারমুক্ত হয়। জকিগঞ্জ মুক্ত দিবস উদ্যাপনের লক্ষ্যে আজ শুক্রবার জকিগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। সকাল ১১টায় যুদ্ধাহত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া মাহফিল,বেলা ২টায় মুক্তাঞ্চলের সরকারি স্বীকৃতির দাবীতে র‌্যালী ও বিকাল ২:৩০ টায় আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
২১ নভেম্বর জকিগঞ্জ হানাদার মুক্ত হলেও স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও প্রথম মুক্তাঞ্চলের স্বীকৃতি পায়নি জকিগঞ্জ। এ নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা সিন্ধান্ত নেন ব্যাপক যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বেই জকিগঞ্জকে মুক্ত করতে হবে। সে মতে একাত্তরের ২০ নভেম্বর রাতে যৌথ বাহিনীর এক সাঁড়াশি অভিযানের ফলে ২১ নভেম্বর ভোরে মুক্ত হয় জকিগঞ্জ।
মুক্তিযুদ্ধে জকিগঞ্জ ছিল ৪ নং সেক্টরের অন্তর্ভূক্ত। অধিনায়ক ছিলেন মেজর চিত্ত রঞ্জন দত্ত। সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত দেওয়ান ফরিদ গাজী ছিলেন এই সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা। ৬টি সাব সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন মাহবুব রব সাদী, লে. জহির উদ্দিন ও ক্যাপ্টেন এম.এ.রব। সদ্য প্রয়াত দেওয়ান ফরিদ গাজী ৩ এপ্রিল ভারতের করিমগঞ্জে গিযে সেখানকার ডিসি, এসপিসহ আসাম সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন। বাংলাদেশী শরনার্থীদের থাকা খাওয়া ও যুদ্ধাস্ত্রের  ব্যবস্থা করেন।
একাত্তরের ২৭ মার্চ জকিগজ ডাক বাংলোয় এক গোপনীয় বৈঠকে সিদ্ধা›ত হয় জকিগঞ্জ থানার সকল ইপিআর ক্যাম্পের পাক সেনাদের খতম করার। ২৮ মার্চ  বীর মুক্তিযোদ্ধা মেকাই মিয়া, চুনু মিয়া, আসাইদ  আলী, ওয়াতির মিয়া, তজমিল আলী, মশুর আলী, হাবিলদার খুরশিদ, করনিক আবদুল ওয়াহাব , সিগনালম্যান আবদুল মোতালেব প্রমুখ প্রথমে জকিগঞ্জ ও মানিকপুর ইপিআর ক্যাম্পে অপারেশন চালিয়ে পাক সেনাদের খতম করে জকিগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন।
এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী, এমএলএ আবদুল লতিফ, এমএলএ আব্দুর রহিম, সেক্টর কমান্ডার চিত্ত রঞ্জন দত্ত, মিত্র বাহিনীর দায়িত্ব প্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার ওয়াটকে, কর্নেল বাগচি সহ মাছিমপুর ক্যান্টনম্যান্টে জকিগঞ্জকে স্বাধীন করার এক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ঐ পরিকল্পনা ছিল কীভাবে কুশিয়ারার ওপারে ভারতের করিমগঞ্জের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে জকিগঞ্জ দখল করা যায় এবং এ পরিকল্পনা মতই জকিগঞ্জ মুক্ত হয়। আক্রমণের পূর্বে অন্য কেউ এমনকি অনেক মুক্তিযোদ্ধারাও এ ব্যাপারে জানতেন না। এর নেতৃত্বে ছিলেন  আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে  আব্দুল লতিফ, ইসমত চৌধুরী ও আব্দুল মুয়িদ চৌধুরী প্রমুখ।
মুক্তাঞ্চলের প্রথম আইন সৃংখলা রক্ষা বাহিনীর ডেপুটি কমান্ড  বিহার প্রদেশের চাকুলিয়ায় বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জালালাবাদ গ্যাসের পরিচালক সিলেট জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জকে মুক্ত করার পরিকল্পনা অনুসারে ২০ নভেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী ৩টি দলে বিভক্ত হয়ে প্রথম দল লোহার মহলের দিকে ও দ্বিতীয় দল আমলসীদের দিকে অগ্রসর হয়। মূল দল জকিগঞ্জের কাষ্টমঘাট বরাবর করিমগঞ্জ কাষ্টম ঘাটে অবস্থান নেয়। প্রথম ও দ্বিতীয় দল নিজ নিজ অবস্থান থেকে কুশিয়ারা নদী অতিক্রম করে  জকিগঞ্জের দিকে অগ্রসর হয়। পাক বাহিনী খবর পেয়ে  দিকবিধিক ছুটোছুটি শুরু করে । মুক্তিবাহিনী তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে ভেবে তারা আটগ্রাম-জকিগঞ্জ সড়ক দিয়ে পালাতে থাকে  ইতিমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় দল জকিগঞ্জ পৌছে যায়। মুল দল কুশিয়ারা নদীতে রাবারের বালিশ দিয়ে সেতু তৈরী  করে জকিগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে। তখন পাক সেনাদের বুলেটে শহীদ হন ভারতীয় বাহিনীর মেজর চমন লাল ও তার দুই সহযোগী।  এ সময় কয়েকজন পাক সেনাকে আটক করা হয়। এভাবেই মুক্ত হয় জকিগঞ্জ। একুশে নভেম্বর ভোরে জকিগঞ্জের মাটিতেই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেন মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক আটকৃত বন্দীদের  জকিগঞ্জ থানা  থেকে মুক্ত করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা জকিগঞ্জকে প্রথম মুক্তাঞ্চলের স্বীকৃতির দাবী জানিয়েছেন।