স্টাফ রিপোর্টার :
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নাম প্রত্যাহারের দাবিতে সিসিক কাউন্সিলররা ১৫ দিনের কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন। গতকাল রবিবার দুপুরে সিলেট সিটি করপোরেশন মিলনায়তনে ‘সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে হয়রানির প্রতিবাদে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচীর ঘোষণা করেন কাউন্সিলররা। আগামী ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচী চলবে। একইসাথে ‘আমরা সিলেটবাসী’র ডাকা আজ সোমবারের হরতালেও তারা সমর্থন জানিয়েছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সিসিক কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, ‘‘নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে ২৭টি ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও ৯ জন মহিলা কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে পরিচালিত সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এ পরিষদের প্রধান ব্যক্তিত্ব, নগরবাসীর লক্ষাধিক ভোটে নির্বাচিত, সকল উন্নয়ন কার্যক্রমের রূপকার এবং তা বাস্তবায়নে অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় সকল ক্ষেত্রে স্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনাকারী সিপাহসালার হচ্ছেন, আমাদের নগরপিতা, ‘পরিবর্তন ও উন্নয়ন’ কর্মসূচীর রূপকার, জননন্দিত ব্যক্তিত্ব আরিফুল হক চৌধুরী।’’
তিনি বলেন, ‘সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে বিশ্বমান উপযোগী একটি আধুনিক নগর গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আমাদেরকে সাথে নিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম সফলভাবে সমাপ্ত করতে যখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত তাকে হয়রানি করতে গ্রহণ করা হয়েছে হিংস্র উদ্যোগ। তাকে একটি হত্যা মামলার আসামী করা হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, প্রখ্যাত কুটনীতিবিদ, জাতির গর্বিত সন্তান, সিলেটবাসীর অহংকার, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ.এস.এম. কিবরিয়া হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার আজ জাতীয় দাবী। বিগত প্রায় দশ বছর যাবৎ এ হত্যার তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা সন্দেহ ও বিতর্ক। ইতিমধ্যে দু’দফা অভিযোগপত্র দাখিল করা হলেও মরহুম শাহ এ.এস.এম. কিবরিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে অনাস্থা জ্ঞাপন করা হয়েছে। তৃতীয় দফা দাখিলকৃত অভিযোগপত্র সম্পর্কেও শ্রদ্ধেয় কিবরিয়া পরিবারের কেউই অবগত নন। তৃতীয় দফা দায়েরকৃত অভিযোগপত্রে সংযুক্ত করা হয়েছে জননন্দিত নগরপিতা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। আমরা নির্বিকার চিত্তে আপোষহীন কন্ঠে বলতে চাই- শাহ এ.এস.এম. কিবরিয়া জাতির গর্বিত সন্তান, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারী খুনীদের চিহ্নিত করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো একমাত্র রাষ্ট্রের পক্ষেই সম্ভব। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করলে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা দুঃসাধ্য নয়। রহস্য, ষড়যন্ত্র, চক্রান্তের বেড়াজাল থেকে সংশ্লিষ্টদের বের হওয়া জরুরী।’
‘কিবরিয়া হত্যাকান্ডে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কোন ভাবেই জড়িত থাকেতে পারেন না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিগত দশ বছর সময়কালে অনেকের নাম উচ্চারিত হলেও সদ্য দাখিলকৃত অভিযোগপত্র ব্যতীত অন্য কোথাও কখনো মেয়র আরিফের নাম উচ্চারিত হয়নি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাম্প্রতিক উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে যাদের গাত্রদাহ সৃষ্টি হয়েছে তারা তাদের সহযোগী যারা সিলেট নগরীকে ভূতুড়ে নগরী হিসেবে দেখতে চায়, তারাই নানা সমস্যা ও সংকট সৃষ্টি এবং তা স্থায়ী করে নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে চায়, তারা একত্রিত হয়ে পরশ্রীকাতার নোংরা খেলা খেলতে গিয়ে মেয়র আরিফকে হয়রানী করতে চাচ্ছে। প্রকারান্তরে এমনতর মিথ্যাচারের কারনে আসল খুনী ও দোষীদের রক্ষা করাই হচ্ছে তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।’
এক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে তথা সিলেট নগরবাসীর স্বার্থে সর্বোপরি আইনের শাসন, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল ভূমিকা আবশ্যক।’
‘সিলেটের আপামর জনগণ আরিফের পাশে আছে’ উল্লেখ করে ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, ‘সকল ষড়যন্ত্রের জাল চিহ্ন করে মেয়র আরিফ নগরীর উন্নয়ন পরিচালনা করবেন ইনশাআল্লাহ।’
লিখিত বক্তব্যের শেষের দিকে কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশিট থেকে মেয়র আরিফের নাম প্রত্যাহারের দাবিতে ১৫ দিনব্যাপী কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- গণসংযোগ (সিলেট নগরের সকল শ্রেণী পেশার সংগঠন ও ব্যক্তিত্বের সাথে মতবিনিময় ও গণস্বাক্ষর অভিযান), সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সকল কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিকী কর্ম বিরতি, সিলেটের সর্বস্তরের সচেতন জনগণের মানববন্ধন, অন্ধকারে আলোর মিছিল, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান এবং নগরভবন প্রাঙ্গণে গণসমাবেশ ও পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা।
এদিকে সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলররা জানান- আজ সোমবার ‘আমরা সিলেটবাসী’ নামক সংগঠনের ডাকা হরতালে তাদের সমর্থন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট ছালেহ আহমদ চৌধুরী, সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন, দিনার খান হাসু, রেজওয়ান আহমদ, সিকন্দর আলী, আব্দুল জলিল নজরুল, মো: রাজিক মিয়া, এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল, আব্দুল মুহিত জাবেদ, সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, মোহাম্মদ ছয়ফুল আমিন বাকের, মো: আব্দুর রকিব তুহিন, সোহেল আহমদ রিপন, দেলোয়ার হোসেন সজীব, তাকবির ইসলাম পিন্টু, নজরুল ইসলাম মুনিম, এডভোকেট রোকসানা বেগম শাহনাজ, সালেহা কবীর শেপী, আমেনা বেগম রুমি, কুহিনুর ইয়াসমীন ঝর্না, রেবেকা বেগম রেনু, দিবা রাণী দে বাবলী।