মাহাবুবুর রহমান, শাবি
দেশের বিভাগগুলোতে পুষ্টিহীনতার হার কমলেও সিলেট বিভাগের শিশুদের পুষ্টিহীনতার হার কমেনি এমন চিত্র উঠে এসেছে এক গবেষণায়। পুষ্টিহীনতার চরম মাত্রা প্রকাশ পেয়েছে এ গবেষণায়।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র-আইসিডিডিআরবি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) পরিসংখ্যান বিভাগ যৌথভাবে সিলেট বিভাগের ৪১ উপজেলার এক হাজার ৬২৫ জন শিশুর উপর এই গবেষণাটি চালায়। ‘শিশুদের অপুষ্টির ঝুঁকিতে থাকা সিলেট বিভাগের সঙ্কটাপন্ন এলাকাগুলোর মূল্যায়ন’ শীর্ষক গবেষণাটি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইনভাইটেশন টু দ্যা আরজিএফডবিøউ প্রজেক্ট ফাইন্ডিংস্ ডিসেমিন্যাশন সেমিনার’ শীর্ষক এক কর্মশালায় উপস্থাপন করে গবেষক দল। সহপ্রধান গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন জানান, বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম, উচ্চতার তুলনায় ওজন কম এবং বয়সের তুলনায় ওজন কম- এ তিনটি সূচকের ভিত্তিতে শিশুদের পুষ্টিহীনতা পরিমাপ করা হয়েছে।
যেখানে সিলেট বিভাগে পুষ্টির সার্বিক অবস্থার মধ্যে ৩২.৭ শতাংশ শিশু বয়সের তুলনায় উচ্চতায় কম, ১২.৭ শতাংশ শিশু উচ্চতার তুলনায় ওজনে কম এবং ২৫.৫ শতাংশ শিশু বয়সের তুলনায় ওজনে কম সমস্যায় ভুগছে বলে এ প্রকল্পের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। যা সারাদেশের গড় থেকে বেশিও বলে জানান এ সহপ্রধান গবেষক।
গবেষণায় দেখা যায়, সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় শিশুদের পুষ্টিহীনতার সমস্যা সবচেয়ে বেশি। যেখানে বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম ও বয়সের তুলনায় ওজন কম যথাক্রমে ৪১.২ ও ২৯.৭ শতাংশ শিশুর।
এরপর সিলেট জেলায় শিশুদের উচ্চতার তুলনায় ওজন কম ১৪.৫ শতাংশ শিশুর।
অন্যদিকে সিলেট বিভাগের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় শিশুদের অপুষ্টির সমস্যা তুলনামূলকভাবে কম বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। যেখানে, বয়সের তুলনায় উচ্চতায় কম, উচ্চতার তুলনায় কম ওজন এবং বয়সের তুলনায় ওজন কমের হার যথাক্রমে ২৫.০০, ৬.৫০ এবং ১৭.৬০ শতাংশ।
এ গবেষণায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় শিশুদের বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম হওয়ার ফলে পুষ্টিহীনতার হার নি¤œরূপ উঠে এসেছে- বিশ্বনাথে ৩৬.২%, জকিগঞ্জে ৩৫.৫%, জগন্নাথপুরে ৩৫.৫%, ছাতকে ৩৪.২%, দক্ষিণ সুরমায় ৩৪.২%, ধর্মপাশায় ৩৪.০%, সিলেট সদরে ৩৩.৯%, মাধবপুরে ৩৩.৮%, লাখাই ৩৩.৪% এবং গোলাপগঞ্জে ৩৩.৪%।
সিলেট বিভাগে বয়সের তুলনায় ওজন কমের সমস্যায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলাগুলো হল- কুলাউড়ায় ৩২.৭%, বিশ্বনাথে ৩১.৭%, দক্ষিণ সুরমায় ২৯.০%, জকিগঞ্জে ২৮.৭% এবং জগন্নাথপুরে ২৬.৬%।
এ ছাড়া উচ্চতার তুলনায় ওজন কমের সমস্যায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলাগুলো হল- কুলাউড়ায় ১৪.৫%, জকিগঞ্জে ১২.৫%, বিশ্বনাথে ১২.৩%, জগন্নাথপুরে ১২.০%, দক্ষিণ সুরমায় ১২.০%, ছাতকে ১১.৮%, তাহিরপেুরে ১১.৪২%, সুনামগঞ্জে ১১.২৮%, আজমেরীগঞ্জে ১১.২০% এবং জুড়ীতে ১১.১৮%।
গবেষণার সহপ্রধান গবেষক অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশে শিশুদের পুষ্টির পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নতি হলেও, কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিশেষ করে সিলেট বিভাগে শিশুদের পুষ্টিহীনতার হার এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। অপুষ্টি শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী শিশুদের অপুষ্টিজনিত সমস্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, আমরা সিলেটে শিশুদের অপুষ্টির চিত্র বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা গুলো চিহ্নিত করি। যা নীতিনির্ধারকদের জন্য শিশুদের অপুষ্টি নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হতে পারে বলে আমরা মনে করি।
গবেষণাটি পরিচালনায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) শিশু পুষ্টি বিজ্ঞানী অধ্যাপক মো. ইকবাল হোসেইনের সহযোগিতায় নেওয়া হয়েছে বলে জানায় গবেষক দল।
এ গবেষণা প্রকল্পে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন শাবির পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাশেদ বাবু, সুমাইয়া তাসনিম, ফখরুল ইসলাম, প্রসেনজিৎ বসাক, মো. সাব্বির হোসেইন ও মাহফুজ জিয়াদ। এ ছাড়া গবেষণার জরিপে ৩০ জন মাঠকর্মী প্রায় পাঁচ মাস ধরে তথ্য সংগ্রহে নিযুক্ত ছিলেন।