এনআইডি সেবায় নতুন অধ্যাদেশ আসছে

4

কাজির বাজার ডেস্ক

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিতে আইন সংশোধন করেছিল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। সেই আইন স্থগিত করে জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্ট সেবা নিয়ে দুর্ভোগ-জটিলতা নিরসনে স্বতন্ত্র কমিশন প্রতিষ্ঠায় ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন), ২০২৫’ নামে একটি অধ্যাদেশ করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এতে ইসির অধীনে থাকবে, নাকি অন্যত্র চলে যাবে এনআইডি সেবা, সেটি নিয়ে ইসিতে চলছে জোর আলোচনা। এই অবস্থায় এনআইডি সেবার ভাগ্য ঝুলে আছে। যদিও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
এনআইডির কার্যক্রম নিয়ে স্থানীয় সরকার, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের মতামতও নিচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। খসড়াটি নিয়ে পর্যালোচনার লক্ষ্যে আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত দেওয়া সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির প্রথম সভা গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের এ বৈঠকে ইসি সচিবালয়ের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, এনআইডির কাঠামোগত অবস্থানটা আরও ব্যপ্ত করার জন্য একটু বাড়ানোর জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, এটার ব্যাপারে কেবিনেট ডিভিশন একটা উদ্যোগ নিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। এর বাইরে কিছু বলার অবকাশ নেই। এনআইডি নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমি কিছু স্পষ্ট করে জানি না বলেও উল্লেখ করেন ইসির সিনিয়র সচিব। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) কর্মরত কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহŸায়ক ও ইসির উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২) মোহাম্মদ মনির হোসেন এ বিষয়ে বলেন, সিইসি মহোদয় ইতিমধ্যে বলেছেন সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের জন্য এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রয়োজন। কমিশনের অবস্থান এখনো এটিই আছে। তিনি বলেন, প্রথমে স্বরাষ্ট্রে নেওয়ার কথা ছিল। এনআইডি যেহেতু ভোটার তালিকা এবং নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সুতরাং এনআইডি কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনের বাইরে নিলে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। তাই আমরা চাই, এই সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকুক।
এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে আইন করা হয়েছিল, ক্ষমতার পালাবদলে তা বাতিল চেয়ে চিঠি দেয় ইসি সচিবালয়। এ ধারাবাহিকতায় গত ১৬ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছিলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নিজেদের কাছে রাখতে নির্বাচন কমিশনের পাঠানো প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এটা সবচেয়ে দ্রæততম সময়ে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এরই মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থা’ নামে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গঠন করার বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ করে। অবশ্য এ নিয়ে বেশ আপত্তি জানিয়ে ২৬ জানুয়ারি সিইসি বলেছিলেন, ভোটার এনআইডি কার্ড, ভোটার রেজিস্ট্রেশন যেটা উনারা বলেছেন পরবর্তী পর্যায়ে একটা আবার স্বাধীন অধিদপ্তর/পরিদপ্তরে হ্যান্ডওভার করার জন্য সাজেস্ট করছেন। …আরেকটা কর্তৃপক্ষকে দিলে আমার কি তার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে? এটি অসম্ভব।
‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া নীতিমালা ও চ‚ড়ান্ত অনুমোদন সংক্রান্ত আলোচনায় উল্লেখ করা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া প্রণয়ন সময়োপযোগী। তবে, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন না রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা সমীচীন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্মনিবন্ধন সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে এনআইডি এবং এনআইডির ভিত্তিতে পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় অনাবশ্যক জটিলতা এবং জনদুর্ভোগ পরিহার করা আবশ্যক। এই উদ্দেশ্যে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ পরিমার্জন করে উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে উপস্থাপন করতে পারে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন) গঠনে সরকারের নতুন উদ্যোগটি এখনো খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে বলে মনে করছে ইসি সচিবালয়।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, খসড়ার ব্যাপারে কথা হয়েছে। এটা আলোচনাধীন রয়েছে। এটা কেবিনেট ডিভিশনের প্রাধিকার। অতিরিক্ত সচিব লেভেলের মিটিং হয়েছে। সিম্পল ফ্রেমওয়ার্ক সম্পর্কে মতামত দিয়েছে। কোনো কিছু চ‚ড়ান্ত নয়। ইসির অধীন থেকে এনআইডি সেবা অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
এনআইডি সেবা অবশ্যই ইসির অধীনে থাকা উচিত-সিইসিঃ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন মঙ্গলবার বিকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলমান আছে। সামনে একটি নির্বাচন আছে। বাস্তব বিষয়াদি সব বিবেচনায় নিয়েই সরকার সিদ্ধান্ত নেবেÑএটি আমি ধারণা করতে পারি। ইতিমধ্যে প্রাথমিক সভায় প্রতিনিধির মাধ্যমে আমাদের মতামত তুলে ধরেছি। সভার কার্যপত্র এখনো পাইনি। সেটি পেলে আমরা বুঝতে পারব তাদের চিন্তাভাবনা কী। এ বিষয়ে আমাদের মতামত সরকারকে লিখিত আকারেও জানাব। সরকারের সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে কিছু করে ফেলবে আমি এমনটা মনে করছি না। যদি ইসি থেকে এনআইডি চলে যায়, তাহলে কী সমস্যা হতে পারে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমস্যা যা হবে আমরা লিখিত আকারে জানাব। সমস্যা তো হবে। তবে সরকার এক ধরনের চিন্তা করছে কীভাবে সব ধরনের নাগরিক সেবা এক জায়গা থেকে দেওয়া যায়।
খসড়া করার আগে ইসির সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন ছিল কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখেন এনআইডিটা কিন্তু নিয়ে যাচ্ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনও করে ফেলেছিল, কার্যকর হয়নি। আমরা সরকারকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, এটি স্বরাষ্ট্রে যাওয়াটা ঠিক হবে না। কীভাবে কাজটা করা যেতে পারে এটির একটি চিন্তা আছে তো। এটা এমন না যে, শুধু এনআইডিটা আমাদের থেকে নিয়ে গেল আর সবকিছু হয়ে গেল। এমন হওয়া উচিতও না। এমন কিছু হবে বলে আমি অন্তত মনে করছি না। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের মতামতের গুরুত্ব দেওয়া হবে। এনআইডি চলে যাবে এ বিষয়ে ইসি কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি হতাশার মতো চলে এসেছে বলেও জানান সিইসি।