স্বামীকে হত্যার দায়ে স্ত্রীসহ তিন জনের ফাঁসি

2

সিন্টু রঞ্জন চন্দ

সিলেটের জাফলংয়ে চাঞ্চল্যকর স্বামী আলে ইমরান হত্যার দায়েরকৃত মামলায় স্ত্রী, পরকীয়া প্রেমিক ও তার সহযোগীসহ ৩ জনকে মৃত্যুদÐ (ফাঁসি) দিয়েছেন আদালত। রায়ের পাশাপাশি দÐপ্রাপ্ত সকল আসামীকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত চতুর্থ আদালতের বিচারক শায়লা শারমিন এ রায় ঘোষণা করেন। ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) মো. কবির হোসেন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফাঁসির দÐপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছেন- কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানার ছেত্রাগুরাই গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের মেয়ে ও আলে ইমরানের স্ত্রী খুশনাহার (২২) তার পরকীয়া প্রেমিক গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর থানার দড়িতাজপুর গ্রামের মো. সোলাইমান মন্ডলের ছেলে মো. মাহামুদুল হাসান উরফে মাহিন উরফে মানিক মন্ডল (২২) ও তার সহযোগী নারায়নগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার দাউদপুর এলাকার কাজিরটেক গ্রামের মো. জিন্নাত আলীর ছেলে নাদিম আহমদ উরফে নাঈম (১৯)। রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত সকল আসামী আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানার হিলচিয়া এলাকার ছেত্রাগুরাই গ্রামের মো. আব্দুল জব্বারের ছেলে আলে ইমরান (৩৩) ঢাকা শহরে বিভিন্ন জুতার খারখানায় জুতা তৈরীর কাজ করে আসছিলেন। ঘটনার প্রায় ৫ বছর পূর্বে খুশনাহারকে বিবাহ করে আলে ইমরান স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতে থাকেন। এরপর খুশনাহার পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন। ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল আলে ইমরান স্ত্রী খুশনাহারকে নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে যান। ১৫ এপ্রিল দুপুর ১ টার দিকে ইমরান স্ত্রীকে নিয়ে হযরত শাহ জালাল (র.) মাজার জিয়ারত করাসহ সিলেট ঘুরতে আসার জন্য বাড়ি হতে রওয়ানা হন। ১৬ এপ্রিল সকাল ৮ টার দিকে গোয়াইনঘাট থানার জাফলংয়ের বল্লাঘাটস্থ রিভার ভিউ রিসোর্ট এন্ড আবাসিক হোটেলের ১০১ নং কক্ষ ভাড়া নেন। ওইদিন রাত ৯ টা হতে ১৭ এপ্রিল ভোর ৫ টার মধ্যে যেকোন সময় স্ত্রী খুশনাহার তার পরকীয়া প্রেমিক ও অপর ২ সহযোগী মিলে আলে ইমরানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তার লাশ উক্ত রিসোর্টের বাউন্ডারী দেওয়ালের পশ্চিম পাশে পাথর ও গাছের ডালপালা দিয়ে গুম করে রেখে পালিয়ে যায়। ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল বিকেলে ঘটনাস্থলে এক যুবকের লাশ পাথরচাপা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এদিকে পুলিশ নিহতের পরিবারকে বিষয়টি জানালে তার পরিবার ওসমানী হাসপাতালের মর্গে গিয়ে আলে ইমরানের লাশ সনাক্ত করেন। এ ঘটনায় নিহতের পিতা মো. আব্দুর জব্বার বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে গোয়াইনঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং-১৮ (১৮-০৪-২০২৩)। দায়রা ১০৩৩/২০২৩ইং। পরবর্তীতে এ হত্যাকাÐে জড়িতদের শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে ১৯ এপ্রিল রাতে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পৃথক দুটি অভিযানে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি খুশনাহার, পরকীয়া প্রেমিক মো. মাহামুদুল হাসান উরফে মাহিন উরফে মানিক মন্ডল, নাদিম আহমদ উরফে নাঈম এবং ও নারায়নগঞ্জের রাকিবকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানায়, নিহতের স্ত্রী খুশনাহারের সাথে মাহমুদুল হাসানের বিবাহ বহিভর্‚ত সম্পর্ক ছিলো। এর জের ধরে ঘটনার দিন আলে ইমরানকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন তারা।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ৩১ আগষ্ট গোয়াইনঘাট থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নি.) এনামুল হাসান আসামী খুশনাহার, পরকীয়া প্রেমিক মো. মাহামুদুল হাসান উরফে মাহিন উরফে মানিক মন্ডল, নাদিম আহমদ উরফে নাঈমকে অভিযুক্ত করেন এবং গ্রেফতারকৃত রাকিব শিশু হওয়ায় তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং- ২৩৫) দাখিল করেন। এবং ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর ৩ আসামীর বিরুদ্ধে চার্জগঠন (অভিযোগগঠন) করে আদালত এ মামলার বিচারকার্য্য শুরু করেন।
দীর্ঘ শুনানী ও ২৮ সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) আদালত অভিযুক্ত খুশনাহার, মো. মাহামুদুল হাসান উরফে মাহিন উরফে মানিক মন্ডল, নাদিম আহমদ উরফে নাঈমকে ১৮৬০ সালের দ্যা পেনাল কোড এর ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককে মৃত্যুদÐ, ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং পেনাল কোড এর ২০১ ধারায় খুশনাহার ও মো. মাহামুদুল হাসান উরফে মাহিন উরফে মানিক মন্ডলকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদÐ ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছরে সশ্রম কারাদÐ প্রদান করা হয়। অপর আসামী নাদিম আহমদ উরফে নাঈমকে ১৮৬০ সালের পেনাল কোড এর ২০১ ধারায় অভিযোগের দায় হতে খালাস প্রদান করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের এপিপি অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন ও আসামীপক্ষে অ্যাডভোকেট মো. ছাব্বির আহমদ মামলাটি পরিচালনা করেন।