হবিগঞ্জে দুই দিনে ৬ জনের লাশ উদ্ধার

6

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা
হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গত দুই দিনে পৃথক ঘটনায় ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাত থেকে গত শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে এ মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ সদর, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলায় ৩টি সড়ক দুর্ঘটনা, চুনারুঘাট উপজেলায় ১টি হত্যাকাÐ, বানিয়াচংয়ে বজ্রাঘাতে ১ জন, নবীগঞ্জে পুকুর থেকে ১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হবিগঞ্জ শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় গাড়ি মেরামতের সময় দিগন্ত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় শাহজাহান মিয়া (২৩) নামে একজন মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। ওয়ার্কশপ শ্রমিক শাহজাহান মিয়া হবিগঞ্জ পৌর বাস টার্মিনাল এলাকায় একটি গাড়ি মেরামতের কাজ করছিলেন। এ সময় দিগন্ত পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দেয়। এতে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
এদিকে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবপুরে বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে সুমন মিয়া (৩২) নামে এক বাসচালক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নারীসহ ৯ জন আহত হয়েছেন। নিহত সুমন মিয়া নরসিংদীর শিবপুর এলাকার মো. সুরুজ মিয়া ছেলে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় উপজেলার জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী মিতালী বাসের সঙ্গে সিলেটগামী একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাসের চালকসহ ১০ জন আহত হন। আহতদের মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাসচালক সুমন মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
আহতরা হলেন হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা লোহাইদ গ্রামের নবী হোসেন ও সাজিদুর রহমান, মিঠাপুকুর গ্রামের আবেদা খাতুন, বানিয়াচং উপজেলার নুর হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার তোফায়েল মিয়া ও আরিফা বেগম, সরাইল উপজেলার জুনাইদ মিয়া, ময়মনসিংহের রানী আক্তার ও সিলেটের আব্দুস সালাম।
এর আগে, গত শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বাহুবল উপজেলার বসিনা নামক স্থানে বাসচাপায় এক দিলীপ রাজঘর (৩৭) নামে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশা যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে, চুনারুঘাট উপজেলার রেমা চা বাগানে দোকান থেকে জালাল মিয়া (৫০) নামে এক শারীরিক প্রতিবন্ধীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জালাল মিয়া গাজীপুর ইউনিয়নের চেগানগর এলাকার মৃত রুসমত আলীর ছেলে। বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে রেমা চা বাগানের ১ নম্বর লাইনের দোকানঘরে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শারীরিক প্রতিবন্ধী জালাল মিয়া তার বাড়ি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে উপজেলার রেমা চা বাগানের ১ নম্বর লাইনে প্রায় ২ যুগ ধরে ব্যবসা ও বসবাস করে আসছেন। বৃহস্পতিবার রাতে ব্যবসা শেষে তিনি দোকানে ঘুমিয়ে পড়েন। গত শুক্রবার সকালে স্থানীয় লোকজন দোকানে তার গলাকাটা মরদেহ দেখতে পায়। পরে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ও ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মরদেহ উদ্ধার করেন।
এ বিষয়ে চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করেছে মর্গে প্রেরণ করেছে। দোকানের ড্রয়ারে প্রায় ৩৩ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। অপরাধী শনাক্তের জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা চলমান রয়েছে।
এছাড়া বানিয়াচং-হবিগঞ্জ সড়কের পার্শ্ববর্তী শুঁটকি নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রাঘাতে সেলিম মিয়া (৩৫) নামে এক মৎস্যজীবী মারা গেছেন। তিনি বানিয়াচং উপজেলার ১ নম্বর উত্তর-পূর্ব ইউনিয়নের বাদাউড়ি মহল্লার জালাল মিয়ার ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে শুঁটকি নদীতে বড় জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন সেলিম মিয়া। এ সময় বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবরে বাদাউড়ি মহল্লায় এলাকায় শোকের ছায় নেমে এসেছে।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ নিখোঁজের ৪ দিন পর মৎস্য খামার থেকে সারজিদ মিয়া নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিহত শিশু সারজিদের বাড়ির পাশে একটি ফিশারি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। শিশু সারজিদ মিয়া উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের উমরপুর গ্রামের আল-আমিনের ছেলে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত সোমবার (৭ অক্টোবর) শিশুটি তার খেলার সঙ্গীদের সঙ্গে বাড়ির পাশে আলীগঞ্জ সেতুতে খেলাধুলা করতে যায়। এ সময় কয়েকজন ব্যক্তি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকযোগে (মিশুক) নৌকা বাইচ দেখানোর কথা বলে চার শিশুকে নিয়ে যায়। পরে নৌকা বাইচ দেখা শেষে জনি ও সোহাগ নামে দুজন একই স্থানে তিন শিশুকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন। তবে অপহৃত শিশু সারজিদ ও অভিযুক্ত ছালিম উদ্দিন আর ফিরে আসেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর শিশু সারজিদকে না পেয়ে জগন্নাথপুর থানায় একটি অপহরণের মামলা দায়ের করেন তার বাবা আল-আমিন। পরে ৯ অক্টোবর অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ উপজেলার উমরপুর গ্রামের একটি মৎস্যখামারে শিশু সারজিদের মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে।