শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি পেতে বিড়ম্বনা

3

কাজির বাজার ডেস্ক

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া ঠেকাতে এবং নারী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি বাড়াতে উপবৃত্তি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ স্কুল শিশুর মধ্যে উপবৃত্তি বিতরণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে মাধ্যমিক থেকে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের ৫৪ লাখ শিক্ষার্থী এই উপবৃত্তির আওতায় রয়েছেন।
আগে এই উপবৃত্তির টাকা শিওরক্যাশ ও বিকাশসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রদান করা হলেও গত বছর থেকে শুধু ‘নগদ’ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এই উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী ‘নগদ’-এর মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি বিতরণ করার সুপারিশ করেছে। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের এই উপবৃত্তি পেতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
জানা যায়, দেশের অনেক জেলায় এখনো মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম নগদে সহজে লেনদেন করা যায় না। আবার অনেক জায়গায় এদের এজেন্ট নেই। আর নগদের একাউন্ট খুলতেও নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সেসব এলাকায় বিকাশ ও শিওরক্যাশের মতো আরও কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও শুধু নগদেই উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। এতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের অনেকেই এই টাকার মেসেজ পেয়েও তা তুলতে পারছে না।
নগদের ক্যাশআউট করার এজেন্ট কাছে না থাকায় শহরে গিয়ে এই টাকা তুলতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক থেকে স্নাতক ও সমমানের ৫৪ লাখ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি ডাক অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ‘নগদ’-এর মাধ্যমে বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা বিভাগ। মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে নাভিশ্বাস উঠেছে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গতবছর এ সংক্রান্ত দুটি নির্দেশিকায় যে কোনো মোবাইল ফাইন্যান্সিং সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছানোর কথা বলা আছে। তা সত্তে¡ও একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একই প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দিতে নীতিমালাই বদলে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আবার চলতি বছর মাধ্যমিক থেকে স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ‘নগদ’ এর মাধ্যমে উপবৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মিতু মনি রংপুরের একটি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেয়। বাবা অসুস্থ থাকায় রসায়ন পরীক্ষার দিন হলে পৌঁছাতে দেরি হয় তার। ফল প্রকাশের দিন জানতে পারে ওই বিষয়ে ফেল করেছে সে। এক বিষয়ে আবারও পরীক্ষা দিতে চায় সে। কিন্তু তার পরিবারের পক্ষে খরচ চালানো সম্ভব নয়। মিতু মনি বলে, গরিব এবং ছাত্রী হওয়া সত্তে¡ও নবম-দশম শ্রেণিতে উপবৃত্তি পাইনি। ফরম পূরণ করলেও অনলাইনে (কেওয়াইসি ভেরিফিকেশন) ঝামেলা হওয়ায় তালিকায় আমার নাম আসেনি। শিক্ষকরা জানান, সরকার উপবৃত্তি দিলেও মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদের মাধ্যমে তা পেতে মফস্বলের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ বিষয়ে মাউশির মাধ্যমিক শাখার পরিচালক সৈয়দ জাফর আলী বলেন, উপবৃত্তি নিয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপবৃত্তি পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. নাছিমা বেগম বলেন, নগদে অ্যাকাউন্ট খুলতে এনআইডি কার্ড লাগে। অনেক শিক্ষার্থীর সেই আইডি কার্ড নেই। তাই তারা উপবৃত্তি পায় না। তবে আমরা যথাসময়ে উপবৃত্তি দেওয়ার চেষ্টা করি।