স্টাফ রিপোর্টার
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে সিলেটে একেবারেই কোণঠাসা ছিলো বিএনপি। হামলা-মামলায় জর্জরিত ছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। রাজপথে কর্মসূচিতেও আসত বাধা ছিলো তাদের। মামলা-গ্রেপ্তারের ভয়ে দলীয় কর্মসূচিগুলোতে পদধারী নেতারাও থাকতেন অনুপস্থিত।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর এসব প্রতিবন্ধকতা কেটেছে। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাকর্মী-সমর্থকরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন কারাবন্দি নেতারা। ফলে দীর্ঘদিন পর সিলেটে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বিএনপি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আজ রবিবার ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে বড় ধরনের জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছে সিলেট মহানগর বিএনপি। বিকেলে নগরী শোভাযাত্রা ও সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা থেকে কয়েক লাখ লোক অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা। ইতোমধ্যে কর্মসূচিকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সিলেট জেলা, মহানগর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এই সমাবেশে নেতা-কর্মীদের বড় জমায়েত ঘটাতে চায় দলটি। শেখ হাসিনার পতনের সিলেটে বিএনপির এটিই প্রথম সমাবেশ।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এই সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের শক্তিমত্তা জানান দিতে চায় দলটি। এছাড়া মাঠ নিজেদের দখলে রাখাও লক্ষ্য। সমাবেশ থেকে দ্রæততম সময়ে নির্বাচনের দাবি জানানো হতে পারে।
জানা যায়, রবিবার বেলা ২টায় শুরু হবে শোভাযাত্রা। সেটি সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও কেন্দ্রীয় নেতা বক্তব্য দেবেন।
দলীয় সূত্র জানা গেছে, সমাবেশ সফল করতে সিলেট শহরজুড়ে ছয়টি টিম প্রচার চালাচ্ছে। এছাড়াও বিভাগের প্রতিটি উপজেলা, মহানগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুতি সভা করেছেন দলটির নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি সিলেট জেলা ও মহানগরীর দায়িত্বশীলরা কাজ করছেন। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শুক্রবার রাতে জেলা ও মহানগর বিএনপি প্রস্তুতি সভা করেছে। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় সভায় আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা-সমাবেশ সফল করতে নানা পরিকল্পনা নেয়া হয়।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বিএনপি একটি গণতন্ত্রকামী দল। দীর্ঘদিন ধরে আমরা অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। এই ধারাবাহিক লড়াই ও ছাত্র-জনতার বিস্ফোরণের মুখে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা। দ্রততম সময়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। গণতন্ত্র দিবসে আমরা এসব দাবিই জানাব। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের দমন-পীড়ন সত্তে¡ও আমরা সিলেটের রাজপথে সবসময়ই সক্রিয় ছিলাম। তবে এখন ফ্যাসিস্টরা পালিয়েছে, পুলিশী নির্যাতনের ভয়ও নেই। তাই রবিবার সমাবেশে বিপুল জমায়েতের আশা করছি আমরা।
এর আগে সবশেষ গত বছরের নভেম্বরে সিলেটে বড় জমায়েত করে বিএনপি। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে নভেম্বরে নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বড় সমাবেশ করে দলটি। তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এটি ছিলো প্রায় নয় বছর পর সিলেটে বিএনপির বড় সমাবেশ। এর আগে ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর নির্বাচনের আগে সিলেটে মহাসমাবেশ করে দলটি। সেই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।