কুলাউড়া সংবাদদাতা
উদ্বেগ- উৎকন্ঠা আর আতঙ্কে বুধবার ২১ আগস্ট রাত কাটিয়েছে মনু নদীর দু’তীরের মানুষ। গভীর রাতে যখন নতুন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে তখন বান ভাঙ্গি গেছেরে- বলে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয় মানুষকে। গত ২৪ ঘন্টায় বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকাতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া মানুষগুলো রাতেও ছিলেন নির্ঘুম। মৌলভীবাজারের মনু নদীর তীরের কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার মানুষ এভাবেই পার করেছেন নির্ঘুম এক রাত।
মনু নদীর ভয়াবহ ভাঙনের ফলে কুলাউড়া উপজেলার সাথে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর এবং কমলগঞ্জ উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় ইউনিয়নের সকল রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। ছোট একটি নৌকা নিয়ে উদ্ধার কাজ করাও সম্ভব হচ্ছে না।
২১ আগস্ট বুধবার ছিলো মনু নদীর কুলাউড়া অংশে ২টি স্পটে ভাঙন। কিন্তু গত ২৪ ঘন্টা আরও নতুন ৬টি স্পটে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ৮টি স্পটে ভাঙনের ফলে এক কথায় লন্ডভন্ড হয়ে গেছে কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলা। ভাঙন কবলিত স্থানগুলো হলো কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া, টিলাগাঁও ইউনিয়নের সন্দ্রাবাজ, হাজিপুর (গুদামঘাট) এবং হাজিপুর ইউনিয়নের মিয়ারপাড়া। রাজনগর উপজেলার কদমহাটা ইউনিয়নের কদমহাটা, কামারচাক ইউনিয়ন ও টেংরা ইউনিয়নের মনু নদীর তীরবর্তী এলাকা একামধু, হরিপাশা, উজিরপুর, কান্দিরকুল, আকুয়া, ভাঙ্গারহাট, সৈয়দ নগর, আদিনাবাদ, কোনাগাঁওসহ কামারচাক ইউনিয়নের সবকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুই উপজেলায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
হাজীপুর গ্রামের কনাই মিয়া, পারভেজ মিয়া, জলাল মিয়া, ফয়জু মিয়া, ইন্তাজ মিয়া, ইন্তু মিয়া, মতলিব মিয়া, মন্তাজ আলী, রেনু মিয়া, লতিফ মিয়া ও বাতির মিয়া জানান, মনু নদীর এতো ভয়াবহ ¯্রােত আর ভাঙন জীবনেও দেখিনি। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি। খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ¯্রােতের কারণে মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতেও ভয় পাচ্ছে। অনেকে আবার মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মহিউদ্দিন জানান, পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নে পানিবন্দি মানুষ যাতে আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য ৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ২৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। নগদ টাকাসহ পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে। একটি নৌকা নিয়ে চলছে উদ্ধার কাজ।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ২২ আগককস্ট বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত মনু নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিলো। সকাল ১১টায় মনু নদীর কুলাউড়া রেলসেতু এলাকায় পানি বিপদসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার ও চাঁদনীঘাট মনু সেতুতে বিপদসীমার ১১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে মনু নদীতে সৃষ্ট ভাঙনগুলো আরও বড় হবে এবং লোকালয়ে পানি বৃদ্ধি পাবে।