কাজির বাজার ডেস্ক
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো নির্বাচন কমিশনেও (ইসি) পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। রদবদল চলছে প্রশাসনিক নানা পদে। কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা রয়েছেন তাদের সরিয়ে দীর্ঘদিন যাদের শাস্তিমূলক হিসেবে মাঠপর্যায়ে পদায়ন ছিল তাদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে সচিবালয়ে। অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা রয়েছেন সরকারের সংকেতের অপেক্ষায়। কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলে সরে পড়তে প্রস্তুত তারা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রীয় ও স্বায়ত্বশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও সংস্কারের দাবি উঠে। ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলে এসব প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে। পরিবর্তনের সেই হাওয়া থেকে বাদ যায়নি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনও। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার, সচিবসহ বড় পদগুলোয় এখনো পুনর্গঠন না হলেও কমিশন সচিবালয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন চলছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার এক আদেশে দেশের বিভিন্ন জেলায় পদায়ন হওয়া ছয় নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনবল ব্যবস্থাপনা শাখা-১-এর সহকারী সচিব মোহাম্মদ শহীদুর রহমানের সই করা এক আদেশে জানানো হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই ছয় কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সংযুক্ত থাকবেন। আদেশে বলা হয়, সুনামগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেহের মিয়াকে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-১ অনুবিভাগে, কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমানকে সচিবালয়ের প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগে, সিলেট জেলা কার্যালয়ের নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনকে অতিরিক্ত সচিবের দপ্তরে, গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনকে সচিবালয়ের সংস্থাপন শাখায়, মাগুরা জেলা কার্যালয়ের নির্বাচন কর্মকর্তা নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখায় এবং কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমানকে জনবল ব্যবস্থাপনা-১ শাখায় সংযুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে ১১ আগস্ট এক আদেশে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের চার কর্মকর্তাকে বদলি করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। মোহাম্মদ শহীদুর রহমানের সই করা পৃথক ওই আদেশে রাঙামাটির সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির হোসেনকে বদলি করে উপসচিব হিসেবে সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখায়, নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমানকে নির্বাচন পরিচালনা-১ অধি-শাখায়, নির্বাচন পরিচালনা-১ অধি-শাখার উপসচিব এম মাজহারুল ইসলামকে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কল্যাণ অধি-শাখার উপসচিব, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কল্যাণ অধি-শাখার উপসচিব মোহাম্মদ নুরুল আলমকে রাঙামাটির সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা করার কথা জানানো হয়।
ইসি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মতো সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনও নিজেদের নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। যে কোনো সময় এ সংস্থায় সংস্কারের উদ্যোগ আসতে পারে বলে মনে করছেন তারা। চলমান প্রেক্ষাপটে আগামীতে কমিশনের নেতৃত্বে কারা আসবেন, কবে নাগাদ গঠিত হবে সেই কমিশন এসব বিষয় নিয়েই ইসিতে কানাঘুষা চলছে।
একটি সূত্র জানায়, সরকার পতনের পর ছাত্র বিক্ষোভের মুখে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরাও পদত্যাগ করেছেন। এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা তাদের পদ থেকে সরে যাবেন। তার আগে কমিশন সচিবালয়ের গুরুত্বপূর্ণ আরও বেশ কিছু পদে পরিবর্তন আসছে। এতদিন যাদের অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ (ডাম্পিং) পদে শাস্তিমূলক হিসেবে বসিয়ে রাখা হয়েছিল তাদের গুরুত্বপূর্ণ ও সামনের সারিতে নিয়ে আসা হতে পারে। আর যারা বিভিন্ন কারণে প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আসীন ছিলেন তাদের সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।