শাহ্ মাশুক নাঈম, দোয়ারাবাজার
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের মন্তাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সড়কের দুটি ব্রিজ ও বেশ কয়েকটি স্থানে ভেঙে গিয়েছে। দুই কিলোমিটার সড়কের চারটি স্থানে ভাঙনের কারণে ৪ টি গ্রামের লোকজন ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা এখন যোগাযোগ বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এই স্কুলটির নিচতলায় এখনো বন্যার পানি থৈই-থৈই করায়, ব্রিজ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় স্কুলে শিক্ষক আছে, আসছেনা শিক্ষার্থীরা।
পাহাড়ি ঢলে বিধ্বস্থ উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর-মন্তাজনগর, নছরনগর- নাছিমপুর গ্রামের এই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙনের দুই দিকে শিক্ষার্থীসহ মানুষজন দাঁড়িয়ে আছেন। পাহাড়ি খরশ্রোতা চেলা নদী থেকে তীব্র বেগে এখনো পানি আসছে সড়ক আর ব্রিজের ভাঙা অংশ দিয়ে। মানুষের যাতায়াতের সুবিধায় ভাঙা ব্রিজে দেওয়া হয়েছে একটি বাঁশ। এতে প্রাপ্তবয়স্করা কিছু ভেজা কিছু শুকনো এরকম পার হলেও শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে।
এলাকাবাসী জানান, দৌলতপুর-মন্তাজনগর, নছরনগর ও সৈয়দাবাদ এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র কাঁচা এই সড়কটি
এবারের তিন দফা বন্যায় চারটি স্থানে ভেঙে গেছে। ভেঙে গেছে দুটি কালবার্ট ব্রিজ। পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে ভাঙন কবলিত অংশের মাটি, ঢালাই ও ইট। এখন এই পথে এলাকাবাসী, শিক্ষার্থীদের চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ। কেউ নৌকায়, কেউ ভিজে পানি মাড়িয়ে বাজারে যাতায়াত করেন। তবে নৌকা সহজে মিলে না। যাদের প্রয়োজন আগে থেকে ব্যবস্থা করে রাখেন।
সরেজমিন, মন্তাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নিচ তলায় বন্যার পানি থৈ-থৈ অবস্থা। উপরের তলায় চারজন শিক্ষক-শিক্ষিকা বসে আছেন। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। প্রথমবার স্কুলে ১৭ জুন পানি উঠেছিল। এর পর থেকে এখনো পানি বন্দী রয়েছে স্কুলটি। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র রক্ষার জন্য বেঞ্চের উপর রাখা হয়েছে। স্কুলের মেঝেও স্যাঁতস্যাঁতে।
মন্তাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান জানান, পাহাড়ি খরস্রোতা চেলা নদী লাগোয়া মন্তাজনগর, দৌলতপুর, নছরনগর – সৈদাবাদ সড়কটির বিভিন্ন অংশ পানির তোড়ে ভেসে গেছে। চলাচলের একমাত্র এই সড়কটিতে দুটি কালভার্ট ব্রিজ আছে। ব্রিজ দুটির দু’পাশ ভেঙে যাওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। স্কুলের মাঠ ও নিচ তলায় এখনো পানি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কোথাও নৌকা, আবার কোথাও পানিতে ভিজে তারপরও ঝুঁকি নিয়ে আমরা স্কুলে এসেছি। তবে বাচ্চাদের পাঠাতে ভয় করছেন অভিভাবকরা। তাই স্কুলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী আসছেনা। আমরা প্রতিদিনই স্কুল শেষে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি। স্থানীয় ইউপি সদস্য ফয়াজুর রহমান বলেন, তিনবারের বন্যায় মন্তাজনগর স্কুলে যাওয়ার রাস্তার বেশিরভাগ অংশই ঢলের তোড়ে ভেসে গেছে। স্কুলেরও অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। স্কুলে আসার মুখে দুটি ব্রিজে বড় ভাঙন। দেখলেই ভয় লাগে। এই অবস্থায় কিভাবে শিশুরা স্কুলে আসবে। রাস্তা ঠিক করা না হলে অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে ভয় করবেন।
দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পঞ্চানন কুমার সানা কাজির বাজার বলেন, মন্তাজনগর স্কুলের সামনে দুটি কালভার্ট ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারছেনা। আমরা এই রিপোর্ট ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আব্দুল হামিদ দৈনিক কাজির বাজারকে জানান, মন্তাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দুটি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে এবিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।