কুশিয়ারার পানি না কমায় দীর্ঘমেয়াদী বন্যার কবলে বাসিন্দারা

20

 

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেটের সুরমা তীরবর্তী অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও কুশিয়ারার পানি কিছুতেই কমছে না। বরং সুরমার পানি কমার সময়েও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে। প্রায় একমাস ধরে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে অবস্থান করছে। ফলে কুশিয়ারা তীরবর্তী জনপদ জকিগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, দক্ষিণ সুরমা, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জের বাসিন্দারা দীর্ঘমেয়াদী বন্যার কবলে পড়েছেন।
নগরীর ৪০ নং ওয়ার্ডের অবস্থান দক্ষিণ সুরমা উপজেলা। আর ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা। এই দুই উপজেলার অবস্থান কুশিয়ারা নদী অববাহিকায়। এবারের বন্যায় কুশিয়ারা তীরের বাসিন্দারাই পড়েছেন বেশি দুর্ভোগে।
সিলেট নগরীর ৪০ নং ওয়ার্ডের মনিপুর এলাকার বাসিন্দা লিলু বেগম আক্ষেপ করে বলেন, পানিতে থাকতে থাকতে হাত পা পচে যাচ্ছে। ঘরের মাটির দেয়াল ভেঙে পড়ছে। তবু পানি নামছে না। আগেও বিভিন্ন সময় বাড়িতে পানি উঠেছে। কিন্তু এতো দীর্ঘ সময় কখনো থাকেনি। দীর্ঘদিন ধরে পানির যন্ত্রনা ভোগ করতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এখন মনে হচ্ছে আর কোনদিনই বুঝি পানি নামবে না। মাছের মতো সারাজীবন পানিতে ভেসে থাকতে হবে।
কেবল লিলু বেগমই নয় বন্যায় পুরো ৪০ নং ওয়ার্ডেরই এই অবস্থা। এছাড়া একই অবস্থা সিসিকের ২৭ নং ওয়ার্ডের কিছু এলাকা। ১৪ জুন থেকে তলিয়ে যেতে শুরু করে এই ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়ক। সেই বন্যার পানি কমার আগেই ১ জুলাই থেকে আবার বন্যা শুরু হয়। ফলে প্রায় একমাস ধরে পানিবন্দি হয়ে আছেন ৪০ নং ওয়ার্ডের মনিপুর, আলমপুর, ছিটা গোটাটিকর এবং ২৭ নং ওয়ার্ডের গোটাটিকর, কিষণপুর, ষাটঘর, গঙ্গানগর এলাকার বাসিন্দারা। দীর্ঘ সময় ধরে পানিবন্দি অবস্থায় থাকায় দুর্ভোগের অন্ত নেই তাদের।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শেওলা এবং অবশলীদ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার উপরে রয়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে কুশিয়ারা নদীর পানি না কমা প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, হাকালুকি হাওর তীরবর্তী মৌলভীবাজারের জুড়ী, বড়লেখা এবং কুলাউড়া উপাজেলার পানিও কুশিয়ারায় এসে নামে। ফলে কুশিয়ারা নদীর পানি কমার গতি খুবই ধীর। আর এবছর একবারের বন্যার পানি কমার আগেই আরেকবার বন্যা দেখা দিচ্ছে। ফলে কুশিয়ারা তীরবর্তী বাসিন্দারা দীর্ঘমেয়াদী দুর্ভোগে পড়েছেন।
কুশিয়ারার পানি না কমায় সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছেন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা। গত বন্যায় পানিবন্দি থাকাবস্থায়ই ফের বন্যা কবলিত হয় ফেঞ্চুগঞ্জ। উপজেলা সদর, হাসপাতাল ও রাস্তাঘাটে এখনও পানি থৈ থৈ করছে। এ উপজেলার বাসিন্দারা এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে দিনযাপন করছেন। একই অবস্থা জকিগঞ্জ উপজেলারও। কুশিয়ারার ডাইক ভেঙে এখনও এই দুই উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিয়ানীবাজার উপজেলায়ও চলতি সপ্তাহে কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করেছে। উপজেলার দেউলগ্রাম, গোবিন্দশ্রী, আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর, আলীনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে। জকিগঞ্জ পৌর এলাকার নরসিংহপুর, উপজেলার ছারিয়া, রারাই এলাকার তিনটি ডাইক ভেঙে এ যাবত উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের ৮৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে লাখের ওপর মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সিলেট জেলায় এখনও ৫ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এরমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ৯ হাজার ৬৩৫ জন।
ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রায় এক মাস ধরে বাজারের সব দোকানে পানি। দোকান খোলা রাখলেও কোন ব্যবসাপাতি হচ্ছে না। আর বাজারের সড়ক দিয়ে তো নৌকা চলাচল করছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডে এখনও বন্যার পানি রয়ে গেছে। বিশেষত নতুন ওয়ার্ডগুলোর বাসিসন্দারা বেশি দুর্ভোগে। এসব ওয়ার্ডের উন্নয়নে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া পানি নামার পর দ্রæততার সাথে কিছু সংস্কার কাজ করা হবে।