শাহ্ মাশুক নাঈম. দোয়ারাবাজারে
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় ওষুধ নিয়ন্ত্রণ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মত যত্রতত্র গড়ে উঠেছে লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি। আইনের কোন রকম তোয়াক্কা না করে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই চলছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ফার্মেসি ব্যবসা।
অভিযোগ রয়েছে, রেজিস্টার চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপসন) ছাড়াই মাদকাসক্তরা চাওয়া মাত্রই অনেক ফার্মেসিতে বিক্রি করছে নেশা জাতীয় বিভিন্ন ওষুধ। এসব ফার্মেসির বেশীর ভাগেরই নেই কোন ফার্মাসিস্ট অভিজ্ঞতা সনদ। নেই ড্রাগ লাইসেন্স। এমনকি অনেকের ট্রেড লাইসেন্সও নেই। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে গড়ে উঠছে প্রশিক্ষন ও ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন শত-শত ফার্মেসি। সেই সাথে ওগুলোতে নিম্নমানের নিষিদ্ধ ঔষধের ছড়াছড়িও রয়েছে ব্যাপক হারে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে মালিক ও কর্মচারীরাই ডাক্তারী করছে। আর প্রতারিত হচ্ছে অসহায় সাধারণ মানুষজন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপজেলায় অবৈধ ফার্মেসি ব্যবসা হয়ে উঠেছে জমজমাট, যেন দেখার কেউ নেই। এতে হুমকিতে পড়েছে এই অঞ্চলের জনস্বাস্থ্য। এছাড়াও অনেক মুদি ও মনিহারি দোকানেও অবাধে বিক্রি হচ্ছে এন্টিবায়োটিক, জন্ম নিয়ন্ত্রণ ওষুধসহ নানা রকম নিম্নমানের ওষুধ। ফলে তৈরি হচ্ছে বড় ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি। অথচ এসব বিষয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নীরব দর্শকের ভ‚মিকায় থাকতে দেখা গেছে।
জানা যায়, ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত দোয়ারাবাজার উপজেলা। যার মধ্যে দোয়ারাবাজার উপজেলা সদর, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকা, টেবলাই বাজার, বাংলাবাজার, কলাউড়া মার্কেট, চৌধুরীপাড়া বাজার, হকনগর বাজার, বাঘমারা বাজার, নরসিংপুর বাজার, বালিউড়া বাজার, নাছিমপুর বাজার, চাইরগাও বাজার, বোগলাবাজার, কান্দাগাও বাজার, পশ্চিম বাংলাবাজার, চকবাজার, মহব্বতপুর বাজার, টেংরাবাজার, কাটাখালী বাজার, আমবাড়ী বাজার, শ্যামল বাজার, শ্রীপুর পান্ডারগাও বাজার, মজুর বাজার, বিয়ানীবাজার, দোহালিয়া বাজার, বঙ্গবন্ধু বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন ছোট-বড় হাট-বাজারে বর্তমানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কয়েকশ লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি। যার অধিকাংশের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের দেয়া গুটিকয়েক লাইসেন্সধারী ফার্মেসি রয়েছে, আর কিছু কিছু ফার্মেসির লাইসেন্স থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে হয়নি লাইসেন্স নবায়ন।
উপজেলার বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে দেখা যায়, ঔষধ প্রশাসনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে শুধু ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে অনেকেই ফার্মেসি দিয়ে বসে পড়েছেন ঔষধ বিক্রির জন্য। ‘প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক ঔষধ বিক্রি না করার জন্য’ একটা নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। এছাড়া ফার্মেসি পরিচালনার
জন্য যে ন্যূনতম যোগ্যতা প্রয়োজন তাও আবার অধিকাংশ ফার্মেসি মালিকদের নেই।
অভিযোগ রয়েছে, এসব ফার্মেসির অধিকাংশই ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রের বাইরে ঔষধ সরবরাহ করে থাকেন এবং রোগীদের বলে থাকেন একই গ্রæপের ঔষুধ ডাক্তার যেটা লিখেছেন তার চেয়েও ভালো। ফলে রোগীরা সরল বিশ্বাসে প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
অবৈধ এসব ফার্মেসিতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক, ঘুমের বড়ি ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, নিষিদ্ধ ভারতীয় নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের নানা প্রকার ওষুধ অবাধে বিক্রি হয়ে আসছে। ফলে একদিকে যেমন ওষুধ ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। অন্যদিকে সাধারণ ক্রেতারা প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি ঘটছে নানা ধরনের ছোট বড় দুর্ঘটনা। প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছে মানুষজন। এতে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন অনেক রোগী ও তাদের পরিবার- পরিজন।
এদিকে লাইসেন্সবিহীন এলোপ্যাথিক ঔষধের পাশাপাশি আবার পশু, আয়ুর্বেদীক ও হোমিওপ্যাথিক ঔষধের ফার্মেসি খুলে বসেছে অনেক মুদি দোকানে। ইউনানীর নামে হরমোন ও বিভিন্ন মানহীন বোতলজাত ঔষধ বিক্রি হচ্ছে দেদারছে।
এই প্রসঙ্গে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.আবু সালেহীন খান দৈনিক কাজির বাজারকে বলেন, উপজেলায় বৈধ লাইসেন্সধারী ফার্মেসির সংখ্যা কত সেটা আমার জানা নেই। এটা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানবে। শুনেছি অনিবন্ধিত ফার্মেসির সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু কাজির বাজারকে বলেন, উপজেলা প্রশাসন এব্যপারে সচেতন আছে। অনিবন্ধিত ফার্মেসিগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।