স্টাফ রিপোর্টার
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ ও যুবলীগ নেতা শমসের আলী সারের বাসায় হামলায় ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে এ অভিযোগ করেন কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ। এতে ১৪ জন অভিযুক্তের নামসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০/২৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। আসামীরা হলেন, শেখ নজরুল ইসলাম বিজয় (৩০), সোহেল (৩২), রাব্বি (২২) ও শেখ রুহিত (২০), তারেক আহমদ (৩১), ছামাদ আহমদ (২২), ফুজায়েল মল্লিক (২০), ইয়াকীন (২০), নাসির (২৩), মুছা খান তপু (২১), শাওন (২৩), রিয়াজুল, মো. রাহেল উদ্দিন রাবেন, বোরহান (২৫)।
অভিযোগে আজাদ উল্লেখ করেন, আসামীরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, ত্রাস সৃষ্টিকারী ও জবর দখলকারী। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপকর্ম করায় স্থানীয় নিরীহ জনগণ আমার নিকট বিচার চাইলে আমি আসামীদের বিচার ও তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেই। এতে আসামীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করে ও তাঁর বাসায় হামলা করে।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাত ১ টার দিকে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুমানোর সময় বাসার সামনে লোকজনের আনাগোনা শুনতে পান আজাদুর রহমান। পরে দেখতে পান যে অভিযুক্তরা পেট্রল ভর্তি জারিক্যান, আগ্নেয়াস্ত্র, মশাল, হকিস্টিক, রামদা, লোহার পাইপসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আজাদুর রহমানের বাসার সামনে মারমুখী অবস্থান নিয়েছে।
এসবের কারণ জিজ্ঞেস করায় তারা হাল্লা চিৎকার দিয়ে আজাদ বলেন, আমরা তোর জম, আজ তর জীবনের শেষ দিন। এ কথা বলেই এলোপাথাড়ি ভাবে বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন অভিযুক্তরা। এতে বাসার প্রায় ১ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। হামলার একপর্যায়ে পুলিশ ও স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে আসলে আসামীরা গুলিবর্ষণ করতে করতে এলাকা ত্যাগ করে। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, যাওয়ার সময় আসামীরা আজাদুর রহমানকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে বাসায় হামলা, চাঁদাবাজি, প্রাণনাশের হুমকি, লুটপাটসহ কয়েকটি কারণে থানায় আরেকটি অভিযোগ দিয়েছেন সিলেট মহানগর যুবলীগের সদস্য শমসের আলী সার (৪৫)।
এতে ১৮ জনের নামউল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর আজাদুর রহমানের ঘটনাতেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। যুবলীগ নেতার অভিযোগ পত্রে অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন শেখ নজরুল ইসলাম বিজয় (৩০), ছামাদ আহমদ (২২), রাব্বি (২২), রিয়াজুল (২৪), ফুজায়েল মল্লিক (২০), ইয়াকীন (২০), সোহেল (৩২), বোরহান (২৫), নাসির (২৩), মো. রাহেল উদ্দিন রাবেন (৩২), তারেক আহমদ (৩১), মুছা খান তপু (২১), শাওন (২৩), শেখ রুহিত (২০), হারুনুর ইসলাম (২০), সাব্বির (২১), সাইফুল ইসলাম ছফু (৩৭)।
অভিযোগপত্রে যুবলীগ নেতা শমসের আলী সার উল্লেখ করেন, আসামীগণ এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, ত্রাস সৃষ্টিকারী, জবর দখলকারী। আমি আমার বাড়ীসংলগ্ন বোরহান উদ্দিন রোডে আবীর ভ্যারাইটিজ স্টোর নাম দোকান দিয়ে ভুষি মালের ব্যবসা করছি। গত ২৬ জুন দুপুরে আসামিরা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। আমি আসামীদের অন্যায়ভাবে চাঁদা দাবীর প্রত্যাখান করলে আসামীরা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরপর ২৭ জুন রাত পৌনে ১২টার সময় হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ আমার বাসা ও দোকানে জোরে প্রবেশ করেন আসামীরা।
তারা আমার নিকট পূর্বের দাবীকৃত ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আমার মাথায়, পিঠে, বুকে ও পায়ে ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যার ভয় দেখায়। তখন আমার কাছে টাকা নাই বলে অনুনয় বিনয় করি। এসময় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আমার বাসায় ও দোকানে এলোপাথাড়ি ভাবে আঘাত করে আনুমানিক ৩ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে। আমার দোকানে ক্যাশ বাক্সে থাকা নগদ ৩৬ হাজার টাকাসহ খুচরা টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। দোকানে থাকা দুধ, বিস্কুট, বিভিন্ন ব্যান্ডের সিগারেটসহ ২ লাখ টাকার মালামাল লুটপাট করে তারা। একইসঙ্গে আসামীগণ আমার বাসার ভিতরে প্রবেশ করে ভাংচুর করার পর স্ত্রীর বুকে পিস্তল ধরে তার গলা হতে এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায়। এছাড়া আলমারিতে থাকা নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার, স্ত্রীর রক্ষিত ৫ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার লুটপাট করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে বাসার অন্য সদস্যদের এলোপাতাড়ীভাবে মারপিট করেন আসামীরা।
দুই ঘটনায় ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
দুইটি পৃথক অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহপরাণ থানার ওসি হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।