জেড.এম. শামসুল :
আজ ৫ ফেব্র“য়ারী। ১৯৫২ সালের এই দিনে নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের জরুরী অধিবেশনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে আপোষহীন সংগ্রাম পরিচালনার কথা ঘোষণা দেয়া হয়।
পূর্ববঙ্গে রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সাথে মুসলিম ছাত্রলীগের একাত্মতা ঘোষণা ছাড়াও আন্দোলন অব্যাহত রাখার কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়।
রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রবর্তনের দাবী দীর্ঘ দিনের। অব্যাহত আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জমে থাকা ক্ষোভ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারী প্রস্ফুটিত হয়ে উঠে। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলন ধাপে ধাপে এগুতে থাকে। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ ছিলেন তিনি শিক্ষাবোর্ডের মাধ্যমে বাংলা চালুর কিছু চিন্তা ভাবনা শুরু করেন। ১৯৪৮ সালের ৭ মে ভোলা জেলার শিক্ষক সমিতির ২৯তম অধিবেশনে পূর্ববঙ্গের মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আমাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক অতিভক্ত আছেন যারা মনে করেন যে, বাংলা কাফেরী ভাষা এবং উর্দ্দু আমাদের ধর্মভাষা। সেহেতু বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দ্দুকে আমাদের মাতৃভাষা ও শিক্ষার মাধ্যমে গ্রহণ করা উচিত কথাটা যখন উঠেছে তখন চুপ থাকলে চলবে না, কিন্তু বাংলা ভাষাকে উৎখাত করে তারই শূন্যস্থানে উর্দ্দুকে বসাতে চাই না। এমন অপচেষ্টা পরিণামে ব্যর্থ হতে বাধ্য। তিনি এ অধিবেশনে বলেন, পরদেশী ভাষা দিয়ে মাতৃভাষাকে স্থায়ীভাবে জয় করা যায় না। এটা দুনিয়ার কোন ইতিহাসে কোন যুগে সম্ভব হবে না। মোগল পাঠানরা তাদের নিজ ভাষা চাপিয়ে দিয়ে বেশী দিন ধরে রাখতে পারে নাই। তিনি এ অধিবেশনে বলেন, আমাদের বিশ্বাস এ যুগ পরিবর্তনের যুগ, আরবী হরফে বাংলা হরফ পরিবর্তন পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষতির কারণ হতে পারে। যাহা রাষ্ট্রীয় জীবনে ষোল আনা রক্ষা পাবে না। ১৯৪৮ সালের ১০ জুন মাধ্যমিক পর্যায়ে বাধ্যতামূলক ভাষা হিসাবে শিক্ষা দানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং হিন্দুদের জন্য ঐচ্ছিক করা হয়। এ দিন করাচিত অনুষ্ঠিত শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা বোর্ডের সভায় উপস্থিত পূর্ববঙ্গের শিক্ষা বিভাগের পরিচালক ডঃ কুদরত-ই-খুদা রোমান বর্ণমালা গ্রহণের প্রস্তাব করেন। ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর এদিন থেকে অধ্যাপক আব্দুল কাসেম কর্তৃক ভাষা আন্দোলন ও তমদ্দুন মজলিসের মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকা প্রকাশ হয়। এ পত্রিকার প্রথম সংখ্যা যুগ্মভাবে প্রকাশ করেন অধ্যাপক শায়েদ আলী ও এনামুল হক। ১৪ নভেম্বর ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯৪৮ সালের ২৭ নভেম্বর ঐদিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের ঢাকা আগমন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ কর্তৃক আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী উত্থাপন করা হয় এবং একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন ছাত্র নেতৃবৃন্দ।