সিলেটে আরেক দফা বন্যার আশঙ্কা

34

সিন্টু রঞ্জন চন্দ
টানা বৃষ্টিতে সিলেটে আরেক দফা বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে মহানগরীতে আবারও জলাবদ্ধতার পাশাপাশি নাগরিকদের মনে জেগেছে বন্যার আতঙ্ক। গত দুই সপ্তাহ আগে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টির প্রভাব পড়েছিল সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় ও মহানগরীতে। বুধবার থেকে চেরাপুঞ্জিতে শুরু হওয়া অবিরাম বর্ষণের সাথে পাল্লা দিয়ে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সিলেটেও শুরু হয়েছে অবিরাম বর্ষণ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট মহানগরীর, মোকামবাড়ি, বেতেরবাজার, কুয়ারপাড়, ঘাসিটুলা, লামাপাড়া, কেওয়াপাড়া, মুন্সিপাড়া, জালালাবাদ আবাসিক এলাকা, যতরপুর, শাহজালাল উপশহর, লালাদিঘিরপাড়, বাগবাড়ি, ২৭ নং ওয়ার্ডের গোটাটিকর, কিষনপুর, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, ষ্টেশন রোডসহ আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় নতুন করে পানি উঠেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ৫৫১টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেগুলো ২৯ মে বন্যার সময় প্রস্তুত করা হয়।
মহানগরের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাংবাদিক আজমল বলেন, আমার ওয়ার্ডের ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই বাজে। একটু বৃষ্টিতে পানি জমে বাসাবাড়িতে উঠে যায়। যদি সঠিক পন্থা অনুসরণ করে এসকল ড্রেনের কাজ হতো তবে জলাবদ্ধতার কবলে আমাদের পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হতো না। সেই সাথে ১ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত ছড়া সংস্কার ও খনন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের লালাদিঘিরপাড় এলাকার ইমরান আহমদ বলেন, কি একটা ঝামেলার মধ্যে আমরা আছি তা বুঝাতে পারবোনা। ঘন্টা দুয়েক বৃষ্টি হলে বাসায় হাটু পানি হয়ে যায়। কবে যে এর থেকে নিস্তার পাবো আমরা জানিনা।
এদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানান, সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ১৮৬ মিলিমিটার। এর মধ্যে সকাল ৬ টা ৯ টা পর্যন্ত ছিলো ১০৫ মিলিমিটার আর ৯ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ছিলো ৮১ মিলিমিটার। এছাড়াও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় তাদের ৩৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জলাবদ্ধতা ও নাগরিক ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, বুধবার থেকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে অবিরাম বর্ষণ হচ্ছে। বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। সেই সাথে সিলেটেও অবিরাম বর্ষণ হচ্ছে। ভারতে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে সিলেটের নদীর পানি বাড়ে এবং সেই প্রভাব সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পড়ে। নগরীতে আমাদের একাধিক টিম দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করছে। আমাদের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মহোদয় ইতিমধ্যে সবকটি বিভাগকে যথাসাধ্য কাজ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। সেইসাথে তিনি নাগরিকদের সচেতন থাকার জন্য আহবান জানিয়েছেন। যেকোন পরিস্থিতিতে নগর কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের পাশে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সুরমা নদীর কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে বুধবার সন্ধ্যায় ১১.৬০ মিটার ও ৯.৫৮ মিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টায় ১২.৫৬ মিটার ও ১০.৩০ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর লুবা নদীর লুবা ছড়া, সারি নদীর সারিঘাট ও ডাউকি নদীর জাফলং পয়েন্ট দিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় ১১.৯০, ১০.২০ ও ৯.২৯ মিটারের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও বৃহস্পতিবার দুপুরে ১২.৯২, ১১.৩৬ ও ১০.১১ মিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ছুটির সময়ে উ™‚¢ত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সকল কর্মকর্তাগণকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় সতর্কতা জারি করেছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এই নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত চেরাপুঞ্জি ও সিলেট মিলিয়ে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ তথ্যমতে ৫৩৫ মিলিমিটার। আরও বেশীও হতে পারে এবং আরও বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। গত ২৯ মে পানি আসার পূর্ব ২ দিন মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮০০+ মি.মি। উপজেলা প্রশাসনসহ জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগণকে সতর্ক অবস্থায় থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।