রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কঠোর নজরদারি

14

রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য ক্রমেই এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। দেশের নিরাপত্তা, পর্যটনশিল্প, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ অনেক বিষয়েই হুমকির সৃষ্টি হয়েছে। আবার কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের ওপর এত বেশি চাপ সৃষ্টি হয়েছে যে তারাও রীতিমতো দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন অপরাধীচক্র রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে নানা ধরনের অপরাধ নেটওয়ার্ক তৈরিতে তৎপর রয়েছে। স্থানীয় সন্ত্রাসীরাও তাদের দলে টানার চেষ্টা করছে। আবার বেসরকারি সংস্থার ছদ্মবেশেও অনেকে অনেক রকম উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে।
গত সোমবার প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, গত রবিবার ভোরে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে এক রোহিঙ্গা নেতা নিহত হয়েছেন। একই দিন টেকনাফের পাহাড়ে চার কৃষককে অপহরণ করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। থানা সূত্রে ওই খবরে আরো উল্লেখ করা হয়, উখিয়া থানায় গত বছরের জুন থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৭টি হত্যাকা-ের বিষয়ে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রের খবরে বলা হয়েছে, টেকনাফের নাফ নদ তীরবর্তী হ্নীলা ও মেরিন ড্রাইভ-সংলগ্ন বাহারছড়া ইউনিয়ন দুটিতে গত দুই মাসে কমপক্ষে ২৫ জন স্থানীয় অপহরণের শিকার হয়েছে। সূত্র আরো জানিয়েছে, অপহরণের বিষয়গুলো নিয়ে স্থানীয় লোকজন সাধারণত থানায় যেতে চায় না। কারণ এসব ঘটনা মুক্তিপণ দিয়েই সমাধা করা হয়। ঠিক তেমনটিই ঘটেছে। কক্সবাজারের টেকনাফে অপহৃত তিন কৃষক ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ক্রমেই ভয়ংকর বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এটা এখন স্পষ্ট যে রোহিঙ্গা অস্ত্রধারীরা যেকোনো সময় আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। দেশি-বিদেশি যেকোনো পক্ষ বা শক্তি, যারা বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে নিজেদের রাজনৈতিক বা ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার করতেও সচেষ্ট হতে পারে। তারাও ওই অস্ত্রধারীদের ব্যবহার করতে পারে।
কথায় আছে, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়ের সমান। আমার দৃষ্টিতে এমনিতেই ১৯৭৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইস্যুটি হ্যান্ডল করার ব্যাপারে বাংলাদেশের কোনো সরকারই দূরদৃষ্টির পরিচয় দিতে পারেনি। ১৯৭৮ সাল থেকে এই ইস্যুতে কী ঘটেছে, এর সামনে-পেছনে কারা ছিল, তাতে বাংলাদেশের কী লাভ-ক্ষতি হয়েছে, তার সব কিছুই বিবেচনায় আনতে হবে। ভাবতে হবে, এই রোহিঙ্গারা অনির্দিষ্টকালের জন্য এভাবে যদি কক্সবাজারে অবস্থান করে, তাহলে বাংলাদেশের জন্য কী কী নিরাপত্তার সংকট সৃষ্টি হতে পারে, তার স্বরূপ ও বিস্তৃতি কেমন হবে এবং তার পেছনে দেশি-বিদেশি কোনো পক্ষ ও শক্তির কোনো হাত থাকতে পারে কি না ইত্যাদি বিবেচনা করে এখনই তা প্রতিরোধ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়মিত গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার হয়।
রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। তাদের সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। কারণ রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য ক্রমেই এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গারা চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আরো কিছু অনাকাক্সিক্ষত কাজে তারা জড়াচ্ছে। ফলে ওই সব এলাকার সামাজিক স্থিতি নষ্ট হচ্ছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প যদি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে, তাহলে সেটি বাংলাদেশের জন্য মহাবিপদ হবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।