আসুন পথশিশুদের পাশে দাঁড়াই

27

 

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের কাছেই প্রিয়ঋতু হিসেবে শীতকাল পরিচিত হয়ে আসছে। কিন্তু রাস্তার ধারের ফুটপাতে, রেলস্টেশনের পাশে কিংবা ব্রিজের ধারে খোলা আকাশের নিচে বড় হওয়া পথশিশুদের কাছে শীতকাল মোটেই আনন্দের নয়। বরং এই ঋতু তাদের জীবনকে করে তোলে দুর্বিষহ। যদিও বাংলাদেশে শীতকাল খুব বেশিদিন স্থায়ী হয় না, তবে ডিসেম্বরের শেষের দিক থেকে শুরু করে পুরো জানুয়ারি মাসে এ দেশে বিরাজ করে তীব্র শীত। যা কিনা পথশিশুদের জীবনকে করে তোলে অসহনীয়। তাদের অবস্থা আরও দুর্বিষহ হয় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে। সাধারণ মানুষ যেখানে কম্বল, চাদর কিংবা শীতের হরেক রকম বস্ত্র পরিধান করেও শীত নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খায়, ঠিক সেখানে পথশিশুরা ছেঁড়া কাথা কিংবা পাতলা একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করে। কনকনে এই শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে কিংবা পথেই রাত্রিযাপন করছে তারা। যে যেভাবে পারছে, শরীর ঢেকে রাস্তার পাশে, লঞ্চ টার্মিনালের পাশে কিংবা পার্কে শুয়ে রাত পার করে।
অনেক পথশিশুর ভাষ্যমতে, নিজেদের নিত্যদিনের অন্ন জোগাড় করতে করতেই সারাদিন কেটে যায় তাদের। কোনো দিন দুবেলা আহার জোটে আবার কোনো কোনো দিন না খেয়েই রাত্রিযাপন করতে হয় তাদের। এর মাঝে শীত আর বৃষ্টি তাদের জীবনে নিয়ে আসে আরও অসহনীয় অবস্থা। কারও কারও ভাগ্যে আবার শীতের ন্যূনতম পরিধেয় বস্ত্রও জোটে না। তীব্র শীতে আরামদায়ক পরিবেশ থেকে বঞ্চিত পথশিশুরা ডায়রিয়া, জ্বর, হাঁচি, কাশি এবং নানান রোগে আক্রান্তের শিকার হয়। পর্যাপ্ত টাকা-পয়সা না থাকায় তারা পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারে না। এ ছাড়া অসুস্থতার কারণে সারাদিন রোজগার করতে না পারায় তাদের খাবারও জোটে না। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) কর্তৃক ২০০৪-এ চালানো এক জরিপে জানানো হয়, দেশে প্রায় চার লাখ ২৯ হাজার পথশিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ থাকে ঢাকায়। ২০০৫ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের এক গবেষণায় বলা হয়, দেশের শতকরা ৪১ ভাগ পথশিশুর ঘুমানোর জন্য কোনো বিছানা নেই; ৪০ শতাংশ প্রতিদিন গোসল করতে পারে না; ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করে; ৮৪ শতাংশ শিশুর শীতবস্ত্র নেই; ৫৪ শতাংশ শিশুর অসুস্থতা দেখার কেউ নেই; ৭৫ শতাংশ পথশিশু অসুস্থতায় ডাক্তার দেখাতে পারে না।
এই জরিপগুলোর তথ্যানুযায়ী দেখা যাচ্ছে, শীতকালে এ দেশের শিশু-কিশোরদের মধ্য থেকে একটা বিরাট অংশ পড়ে থাকে হুমকিতে। বর্তমানে বাংলাদেশে পথশিশুদের নিয়ে অনেক এনজিও নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাদের নিজ উদ্যোগে এবং নিজ অর্থায়নে পথশিশুদের সেবায় কাজ করে আসছে। পথশিশুদের জন্য এটি একটি মহৎকর্ম। কিন্তু অবহেলিত সেসব পথশিশুদের জন্য এই কার্যক্রমগুলোর পাশাপাশি আরও সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন। ‘মানুষ মানুষের জন্য’-এ কথাটিকে বুকে ধারণ করে সবার সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন আমাদের এসব অবহেলিত শিশুদের জন্য। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অনেককেই শীতার্ত পথশিশুদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে। প্রতিবছর তারা অসংখ্য শীতার্তের মধ্যে শীতের কাপড় বিতরণ করে যাচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পথশিশুদের জন্য এগুলো যথেষ্ট নয়। যার ফলে তাদের কষ্ট লাঘব করতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা খুবই প্রয়োজন। নিজ নিজ অবস্থান থেকে যদি সবাই সম্মিলিতভাবে অসহায় পথশিশুদের পাশে দাঁড়ায়, তবেই তাদের কষ্ট ঘুচবে বলে আশা করা যায়।