রেলওয়েকে নিয়ে অতীতে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কোনো কোনো আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের প্রেসক্রিপশনে ‘অলাভজনক’ তকমা লাগিয়ে অনেক রেলপথ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অতীতে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় অনেক রেলপথ দিয়ে ট্রেন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি শিল্প-কারখানা, খাদ্যগুদামের সঙ্গে থাকা রেলপথও তুলে নেওয়া হয়েছিল।
রেল ওয়ার্কশপ, স্লিপার তৈরির কারখানাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ইঞ্জিন ও বগির অভাবে রেলের যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল। রেলে শিডিউল বিপর্যয় চরমে উঠেছিল। বহু রেলস্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ব্যাপক হারে ছাঁটাই করে রেলওয়ের লোকবল প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই রেল খাতকে পুনর্জীবন দেওয়ার কাজ শুরু হয়। বন্ধ রেলপথগুলো চালু করার পাশাপাশি নতুন নতুন রেলপথ তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু যাত্রীসেবার মান কি উন্নত হয়েছে? পূর্বাঞ্চল রেলপথে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। বিলম্বে চলাচল যেন এসব ট্রেনের নিয়ম। ভিড়ের কারণে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়। হকার, হিজড়াদের উৎপাতেও অতিষ্ঠ যাত্রীরা। টয়লেট, ফ্যান ও আলোর স্বল্পতায় মেইল ট্রেনগুলোতে চলা বড় দায়। চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে।
অনেক স্টেশনের ভিআইপি ও প্রথম শ্রেণির অপেক্ষমাণ (বিশ্রামাগার) কক্ষ নিয়মিত খোলা হয় না। দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ করা কক্ষ খোলা হলেও সেখানে বসার মতো পরিবেশ নেই। কোনো কোনো স্টেশনে অপেক্ষমাণ কক্ষই নেই। ট্রেন আসার বিষয়ে নিয়মিত মাইকিং করা হয় না। বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত ছাউনি না থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
শুধু যাত্রীসেবা নয়, একটি চক্রের মাধ্যমে রেলের জমিও বেদখল হয়ে যাচ্ছে। সারা দেশে বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পত্তি থেকে একসময় রেলওয়ের ভালো উপার্জনও হতো। কিন্তু একটি অসাধু চক্র রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি দখল করে আছে। এসব জমি বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও ব্যবহূত হচ্ছে; কিন্তু বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
আশার কথা হলো, প্রধানমন্ত্রীর প্রাধিকারভুক্ত সেবা সংস্থা হিসেবে রেলওয়েকে আধুনিক মানের করে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। পুরনো অনেক রেলওয়ে স্টেশন নতুন করে চালু করা হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে ট্রেনের সংখ্যা। কিন্তু রেলওয়েকে ঘিরে একটি চক্রের নানা কারসাজিতে আটকে আছে রেলের উন্নয়ন। রেলওয়েকে আধুনিক করে গড়ে তোলার পাশাপাশি সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
রেলওয়েকে গতিশীল ও লাভজনক করতে সম্ভাব্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে এটাই প্রত্যাশা।