কাজির বাজার ডেস্ক
হরতাল অবরোধের টানা কর্মসূচিতে থাকা বিএনপি ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে চায়। দুই দিন বিরতি দিয়ে আবারও সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দিলেও পরবর্তীতে আন্দোলনের ধরনে কিছু পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে দলটি। পাশাপাশি আত্মগোপনে থাকা দলের সিনিয়র ও মধ্যম সারির নেতারাও এবার প্রকাশ্যে আসবেন বলে জানা গেছে। টানা কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করার পরিকল্পনা আগে থেকেই করছে বিএনপি। লক্ষ্য অর্জনে এরই মধ্যে সারা দেশে দুই দফা হরতাল ও ছয় দফা অবরোধের কর্মসূচিও পালন করেছে দলটি। পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে সরকারের ওপর ক‚টনৈতিক চাপও বিএনপির পক্ষে ইতিবাচক ভ‚মিকা রেখেছে মনে করা হচ্ছে। এত কিছুর পরও আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীতে বরাবরের মতো কোনো প্রভাব ফেলতে না পারা, নিজ দল ও সমমনাদের কেউ কেউ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া, আন্তর্জাতিক মহলের তৎপরতায় সরকারের সাড়া না দেওয়ায় বিএনপিতে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। ফলে আন্দোলনের ধরনে কিছু পরিবর্তন আনার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।
সূত্র মতে, বর্তমান সময়ে করণীয় ঠিক করতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতারা ঘন ঘন ভার্চুয়াল বৈঠক করছেন। পাশাপাশি সমমনা দল ও জোটগুলোর শীর্ষ নেতারাও বসছেন ভার্চুয়াল বৈঠকে। সেসব বৈঠক আন্তর্জাতিক কার্যক্রম ও আন্দোলনের ধরন নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এসব কিছু আমলে নিয়ে জনগণের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টি মাথায় নিয়েই বিকল্প কর্মসূচি দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী সামনে হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি মাঝে মধ্যে ঘেরাও, বিক্ষোভ ও সমাবেশের কর্মসূচির চিন্তা করা হচ্ছে। এছাড়া বৈঠকগুলোতে আন্তর্জাতিক চাপের বিষয় ছাড়াও জেলা ও মহানগর নেতাদের আন্দোলনে আরও সক্রিয় করার বিষয় আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। পাশাপাশি গ্রেপ্তার এড়াতে নানা কলাকৌশল ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনকে সামনে রেখে ২৬ থেকে ৩০ নভেম্বর রাজপথে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতির মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের কড়া সতর্কবার্তা দেওয়ার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। সারা দেশের নেতাকর্মীকে সর্বোচ্চ শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত এই অবরোধ হবে। তিনি বলেন, ‘অবৈধ একতরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে এবং এই সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার এক দফার যে চলমান আন্দোলন, সেই আন্দোলন অব্যাহতভাবে চলার প্রত্যয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আগামী ২৬ নভেম্বর রোববার ভোর ৬টা থেকে ২৮ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।’
জানা গেছে, এতদিন আত্মগোপনে থাকা অনেক নেতাই আগামী রোববার প্রকাশ্যে এসে কর্মসূচিতে যুক্ত হবেন। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার অন্য দিনের অবরোধের তুলনায় ঢাকার রাজপথে পরিচিত ও প্রভাবশালী নেতাদের মিছিলে বেশি দেখা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মিছিলে দল ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন রুহুল কবির রিজভী, রফিকুল ইসলাম, আবদুল কাদির ভ‚ঁইয়া জুয়েল, নিপুণ রায় চৌধুরী, ইয়াছিন আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান প্রমুখ।