করোনা অভিঘাতের দুই বছর পেরিয়ে নতুন করে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ থেকে সব পেশার কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দেয় দেশটি। এ ঘোষণার ৯ দিনের মাথায় ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশ একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। সে দেশের সরকারের সঙ্গে সমঝোতার আওতায় বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় নেওয়া, আবাসন এবং দেশে ফেরত পাঠানোসহ মালয়েশিয়া প্রান্তের যাবতীয় খরচ বহন করবেন নিয়োগকর্তা।
এক খবরে বলা হয়েছে, এ বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় যাচ্ছে রেকর্ডসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী। এরই মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে দুই হাজার ৫৯৪ জন বাংলাদেশি কর্মী দেশটিতে গেছে। ঢাকায় দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাস জানিয়েছে, এ বছর ‘এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম’ বা ইপিএসের আওতায় তিন হাজার ৬০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মীর দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার এ বছর বাংলাদেশের জন্য এক হাজারের বেশি অতিরিক্ত পারমিট বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০০৮ সালে দুই দেশের ইপিএস কর্মসূচি শুরুর পর এটি হবে সর্বোচ্চ সংখ্যা।
দক্ষিণ কোরিয়া সরকার তাদের শ্রম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার জন্য একটি ব্যবস্থা চালু করেছে, যার নাম ইপিএস বা এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম। এ ব্যবস্থার আওতায় যেসব দেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া হয়, সেই দেশগুলোর একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার জন্য কোরিয়ান সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ অব্যাহত রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইপিএস ব্যবস্থা এবং বিদেশি কর্মী নীতিমালা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও স্বীকৃত। ওই ব্যবস্থা উচ্চস্তরের বেতন, সমান শ্রম অধিকার ও কর্মসংস্থান বীমা, শিল্প দুর্ঘটনা ক্ষতিপূরণ বীমা, জাতীয় পেনশন এবং জাতীয় স্বাস্থ্য এই চার শ্রেণি বীমা নিশ্চিত করে। ইপিএস কর্মীদের কোরিয়ায় আবার প্রবেশে গত বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত অনলাইন নিবন্ধন হয়েছে। নিবন্ধিত প্রার্থীদের কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষা হবে আগামী মাসে।
এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেমের আওতায় দক্ষ কর্মী পাঠানো গেলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আরো লাভবান হবে বলে আশা করা যায়। দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের জন্য ১৩তম বৃহত্তর রেমিট্যান্স উৎস দেশ। যেকোনো দেশে জনশক্তি রপ্তানির জন্য এই ভাষা পরীক্ষাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেসব দেশে আমাদের কর্মীর চাহিদা রয়েছে, সেই দেশের ভাষার দক্ষতার ওপর জোর দিতে হবে।
তবে এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। আমাদের নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। জনশক্তি রপ্তানিতে ভালো অবস্থান তৈরি করা গেলে আমাদের রেমিট্যান্স আগামী দিনে আরো বাড়বে বলে আশা করা যায়।