শ্রীমঙ্গলে খাসিয়া শিশুদের জন্য বিদ্যালয় সংস্কার করে দিলেন ৪ প্রবাসী

3

 

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির শিশুদের জন্য ইউটিউবভিত্তিক চ্যানেল ইনফো হান্টারের উদ্যোগে একটি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একশত ফুট উঁচু পাকা সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে।
এ কাজে সহযোগিতা করছেন ইমন খাঁনসহ জার্মান, লন্ডন, আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চারজন প্রবাসী। অতিথিদের নিয়ে কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ঘরের উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউটিউব চ্যানেল ইনফো হান্টারের পরিচালক সাকিবুর রহমান, ব্যবসায়ী সৈয়দ ইশতিয়াক বাবেল, আসাদুর রহমান, খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী প্রমুখ। এর আগে দরজা জানালাবিহীন জরাজীর্ণ স্কুল ঘরটি লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির শিশুদের পড়াশোনার দুর্ভোগের কথা সম্প্রতি ভিডিওতে প্রকাশ করে ইনফো হান্টার (ওহভড় ঐঁহঃবৎ)। তাদের ফেসবুক পেজেও ভিডিওটি প্রচার করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও প্রচারের পর ওই ভিডিও দেখে দুর্ভোগ লাঘবে স্কুল ঘরটিসহ পাকা সিঁড়ি নির্মাণে মানবিক সহায়তায় এগিয়ে আসেন প্রবাসী ইমন খাঁনসহ জার্মান, লন্ডন, আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বেশ কয়েকজন প্রবাসী। তাদের সহায়তায় লাউয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জির দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটে।
এ বিদ্যালয়ে লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির শিক্ষার্থী ছাড়াও বনসংলগ্ন লেবু বাগানের ১০টি পরিবারের শিশুরাসহ মোট ৪০জন শিক্ষার্থী নিয়মিত পাঠদান করছে। এখানে ২ জন নিয়মিত শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে স্কুলটি। ১ জন নিজস্ব খাসি মাতৃভাষা ও ১ জন বাংলা ভাষায় পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের।
স্থানীয় খাসি অভিভাবক ইতি সুঙ জানান, কয়েকবছর ধরে আমাদের স্কুল ঘরটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল, ঝড় তুফানের সময় আমাদের ছেলেমেয়েরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারতো না। অনেকদূর শহরে বাচ্চাদের নিয়ে পড়াশোনা করানো আমাদের জন্য সমস্যা ছিল। আমরা একদিন নিয়ে গেলে বাকি ৫ দিন নিয়ে যেতে পারতাম না। টাকাপয়সা ও দূরবর্তী থাকায় এইসমস্যা ছিল। সম্প্রতি ইনফো হান্টার চ্যানেলের পরিচালক সাকিবুর রহমান ভাই আমাদের স্কুলের সমস্যা নিয়ে ইউটিউবে প্রকাশ করেন। এতে করে অনেক ভাই আমাদের সমস্যা বুঝতে পারেন। সাকিবুর ভাইয়ের কারণে আজ আমরা স্কুলটি পেয়েছি। আমাদের দীর্ঘ দিনের কষ্টের অবসান ঘটল। নব নির্মিত এই স্কুলের নিয়মিত শিক্ষক সামসুন্নাহার ও এলটি তংপের জানান, এখানে কমিউনিটি স্কুলটি হওয়ার পর আমাদের নিয়োগ দিয়েছেন লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির নেতারা। আমরা দুজন শিক্ষক পাঠদান করাই। একজন বাংলা ও একজন খাসি ভাষার ক্লাস নিচ্ছি। এ বিষয়ে ইনফো হান্টারের পরিচালক সাকিবুর রহমান বলেন, ‘আমি যখন আমার ইউটিউব ও পেজে এটা আপলোড দিই, তখন লাখ লাখ মানুষ দেখে। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি একটি প্রাথমিক স্কুলের। পরে ভাবলাম একটা স্কুলের ব্যবস্থা করে দেব। আমার ভিডিও দেখে অনেকে সাড়া দেন। এর মধ্যে ৪ জনের সহযোগিতায় আমি স্কুলের ব্যবস্থা করে দিই। তাদের দীর্ঘদিনের সমস্যার কিছুটা হলেও অবসান ঘটল। স্কুলটা করতে প্রায় আড়াই লাখ টাকা লেগেছে। সব টাকাই বিদেশি ৪ জন বন্ধুর মাধ্যমে পাই।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য পুঞ্জিগুলোকে এভাবে সহযোগিতা করব। আমার মানবিক ভাইদের সহযোগিতায় এই কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে করে যাব।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও লাউয়াছড়া পুঞ্জিপ্রধান ফিলা পতমী বলেন, স্কুলের জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনেকবার গিয়েছি। কেউ আমাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। আজ সাকিবুর রহমান ভাইয়ের মাধ্যমে আমাদের বাচ্চারা স্কুল পেয়েছে। উনাকেসহ স্কুলটি নির্মাণে মানবিক সহায়তায় যারা এগিয়ে এসেছেন সে ৪ জন ভাইদেরকে আমার খাসিয়া পুঞ্জির সবার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।