দুর্নীতি রোধে নীতিবোধ

60

নীতি থাকলে তবেই দুর্নীতির প্রসঙ্গ আসে। নীতি না থাকার অর্থ নীতিহীনতা। তবে নীতিবোধই সমাজের মূল চালিকা-শর্ত। এ বোধ যখন দূষণের শিকার হয় দুর্নীতির প্রসঙ্গ তখনই উত্থাপিত হয়। নীতিহীনতা ও দুর্নীতি বাহ্যত সমার্থক মনে হলেও দুটি ভিন্ন বিষয়।
সমাজবদ্ধ থাকার নীতিবোধই রাষ্ট্র গঠনের সময় আরো বিস্তৃত অর্থে ক্রিয়াশীল হয়েছে। এ বোধের মূল বিষয় সমষ্টির কল্যাণ ও সুরক্ষা। সংবিধান, আইন-কানুন, পরিচালন ব্যবস্থা সবই এ বোধ থেকে নিঃসৃত। এসবের বিশদীকরণ, বিস্তৃতকরণ একেক রাষ্ট্র একেকভাবে হয়েছে। রাষ্ট্রের পরিচালকবর্গ বা সাধারণ সদস্য—সবার জন্যই মূল বিষয়ে নিষ্ঠ থাকা কাম্য। পরিচালকবর্গের জন্য নিষ্ঠ থাকা অবশ্য কর্তব্য, যদিও বাস্তবে প্রায়ই ব্যত্যয় ঘটে। অর্থাৎ নীতিবোধ দূষণের শিকার হয়। ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রে দুর্নীতির বিস্তার ঘটে। বাংলাদেশ এ প্রবণতার বাইরে নয়।
দুর্নীতির মাত্রা তারাই বেশি বাড়ায়, যাদের দূষণ সক্ষমতা বেশি। সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন এবং ব্যক্তির লোভ-লালসা দুর্নীতির অন্যতম প্রধান কারণ। এটা কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। ঘুষ না দিলে কাজ হয় না, রাজনীতির মাঠে নামার টিকিটও পাওয়া যায় না। সমাজ ও রাষ্ট্রে নতুন নতুন বাণিজ্য চালু হয়েছে; যেমন- ঘুষ বাণিজ্য, ফি বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য প্রভৃতি। রাষ্ট্রের কর্তাদের, প্রশাসনের অধিপতিদের বেতন-ভাতা বাড়িয়েও দুর্নীতির গতি রোধ করা যাচ্ছে না। শুধু সমাজই দূষিত হচ্ছে না, উন্নয়নের গতিও অবদমিত হচ্ছে। এ রোগের সঠিক ও টেকসই নিরাময় দরকার। এর জন্য সবার আগে অধিপতিদের হাতে-পায়ে বেড়ি পরাতে হবে। তা না হলে উন্নয়ন সুষম হবে না, সমৃদ্ধি বেশির ভাগ মানুষের উপকারে আসবে না।