সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েক দফায় ২২৪ জনের বিরুদ্ধে গাড়ি ভাংচুর ও নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়েছে। জেলার ছয়টি থানায় এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে ১১টি। বিশেষ ক্ষমতা আইনে এসব মামলার বাদী হয়েছে পুলিশ।
এসব মামলায় জেলার সব কয়টি উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন আত্মগোপনে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিএনপির ৩৮ জন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এসব মামলায় ২২৪ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত নামা আসামী করা হয়েছে প্রায় ৭০০ জনকে। একের পর এক মামলা গ্রেপ্তার হলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। দ্বিতীয় দফা অবরোধের দ্বিতীয় দিন গত বুধবার সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের দিরাই রাস্তার পয়েন্টে ৫টি গাড়ি ভাংচুর করেছে অবরোধকারীরা।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক সাংসদ কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরুল ইসলাম নুরুল, সহ সভাপতি আনিসুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল সহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২০ থেকে ২৫ জনকে। এইদিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা যখন মামলায় আত্মগোপনে তখন আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে নির্বাচনি প্রচারণা ব্যস্ত সময়পাড় করছেন।
অবরোধ কর্মসূচী পালনের সময় পুলিশের বিভিন্ন মামলায় এখন পর্যন্ত যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা হলেন- জেলা বিএনপির সহ সভাপতি আবুল মনসুর মো. শওকত, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি, ধর্মপাশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মোতালেব খাঁন, জেলা বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক রাকাব উদ্দিন, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক নাসিম চৌধুরী, শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি রওশন খান সাগর, তাহিরপুর যুবদল নেতা স ম খুকন, ছাত্রদল আহŸায়ক রাসেল।
অবরোধের দ্বিতীয় দফায় হঠাৎ সুনামগঞ্জ শহরে ছাত্রদলের মশাল মিছিল এবং সুনামগঞ্জ-সিলেট রোডে গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হয়ে উঠে। শহরে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ যৌথ টহল দিতে দেখা গেছে। এরপর থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে নেতাকর্মীরা আত্মীয় স্বজনসহ বিভিন্ন স্হানে আত্মগোপনে রয়েছেন।
জেলা বিএনপির সহ সভাপতি আনিসুল হক বলেন, রাতের আধারে পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের না পেয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। পরিবারের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন চেক করছে এবং যাকে পাচ্ছে তাকেই গ্রেপ্তার করছে। পুলিশের অত্যাচারে সাধারণ কর্মীরাও এখন বাড়ি ছাড়া।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল জানান, আওয়ামী পুলিশের এসব জুলুম করে লাভ হবে না। তাঁরা মাঠে আছেন। যে কোন মূল্যে তাঁরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করবেন। কোন বাধাই তাদের আটকাতে পারবে না।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট. মোঃ নূরুল ইসলাম নুরুল বলেন, পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঠে নামতে দিচ্ছে না। একের পর এক গায়েবি মামলা দিয়ে গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে। তবুও আমরা কর্মসূচি পালন করছি। মামলা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন করে আমাদের আন্দোলন থেকে সরানো যাবে না।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন বলেন, তাঁর নামসহ জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নামে গাড়ি ভাংচুর ও নাশকতার নামে একটি গায়েবি মিথ্যা মামলা করেছে। এসব মামলার উদ্দেশ্য হলো আন্দোলন থেকে দূরে সরে যাওয়া। এসব মামলায় আমরা ভীত নয়, আমরা মাঠে আছি, মাঠে থাকবো এবং যেকোন মূল্যে কর্মসূচি পালন করবো।
সুনামগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) রাজন কুমার দাস বলেন, নতুন করে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে গাড়ি ভাংচুর ও নাশকতার মামলা হয়েছে। ২৯ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ১১টি। এসব মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।