সহিংস পরিস্থিতি যেমন কোনোভাবেই কাম্য নয়, তেমনি এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সহিংসতার প্রভাব পড়ে নানাভাবেই। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে যে, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসতেই রাজনীতির মাঠে সংঘাত-সহিংসতা-নাশকতার চিরচেনা চিত্র যেন ফিরে এসেছে। বিশেষ করে ২৯ অক্টোবরের হরতাল এবং এর এক দিন পর থেকে টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় বিপুলসংখ্যক যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
ফলে এই আশঙ্কাও উঠে আসছে যে, আগামীতে এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এ ধরনের নৈরাজ্য আরও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে, যা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, পথে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে সারা দেশে পণ্য সরবরাহের স্বাভাবিক চেইন। আর এতে নতুন করে বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম আরও এক ধাপ বেড়েছে। কাঁচামাল সরবরাহের সিডিউল ধরে রাখতে না পারায় শিল্প-কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আলামত আমদানি-রপ্তানি খাতে।
আমরা বলতে চাই, আমদানি-রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লে তা কতটা উদ্বেগের বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া যখন অবরোধে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, পণ্য সরবরাহের স্বাভাবিক চেইন ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে- তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। এটা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই যে, অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, অবরোধের ফাঁদে সামগ্রিক অর্থনীতি পড়তে যাচ্ছে। এতে দেশে খেলাপি ঋণ ও ব্যাংকে তারল্য সংকট আরও বাড়বে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় উদ্বেগজনক হারে কমবে। এতে ডলার সংকট আরও ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছাবে। রিজার্ভের পতনে নতুন গতি পাবে। যা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে- এমন বিষয় উঠে আসছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের সহিংসতা রোধে এগিয়ে আসা উচিত, সহনশীলতার মধ্য দিয়ে যে কোনো সংকট মোকাবিলা করা জরুরি। আর এ জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতিরও উন্নয়ন জরুরি।
আমলে নেওয়া দরকার, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রকোপ কাটিয়ে বাংলাদেশ যখন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছিল, তখনই শুরু হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। যার কঠিন প্রভাব পড়ে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর। এরই মধ্যে ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্যে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ যুদ্ধও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আর এই আশঙ্কা উঠে আসছে যে, এই ধারাবাহিকতায় যদি দেশের রাজনৈতিক অবস্থা অস্থিতিশীল হয়, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যদি ধারাবাহিকভাবে হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়, তবে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া, করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যে কোনো ধরনের সংকট নিরসন হোক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে। সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। রাজনৈতিক সহিংসতা রোধে প্রত্যেক দল সচেতন হোক এবং দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নতি হোক। এটাও সামনে এসেছে যে, বিনিয়োগের পূর্বশর্ত হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এটা ঠিক না থাকলে দেশ ঠিক থাকবে না। রাজনীতিবিদের উচিত সংঘাতের দিকে না গিয়ে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পথ বেছে নেওয়া। তা না হলে অর্থনীতি আর সাধারণ মানুষ উভয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে- এমন আশঙ্কাও উঠে এসেছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জরুরি।