আগামী সপ্তাহে ৩৫৪০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে মিয়ানমার

16

কাজিরবাজার ডেস্ক :
নির্যাতনের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবশেষে ফিরিয়ে নিচ্ছে মিয়ানমার সরকার। দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে তিন হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে ফিরিয়ে নিতে আগামী ২২ আগষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করেছে মিয়ানমার।
তবে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও নাগরিকত্বের স্বীকৃতির নিশ্চয়তা না পেলে রোহিঙ্গারা না যেতে চাইলে এই দফার চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত।
বাংলাদেশ থেকে পাঠানো ২২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা থেকে মিয়ানমার তিন হাজার ৫৪০ জনকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বাছাই করেছে।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে এলেও বাংলাদেশ এটাও বলেছে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হবে না।
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর ২০১৭ সালের অগাষ্ট থেকে পরবর্তী সময়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তার আগে গত কয়েক দশকে এসেছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
২০১৭ সালে আসা রোহিঙ্গাসহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের উখিয়া-টেকনাফের ৩১টি ক্যাম্পে জড়ো করে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতিও নিয়েছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা না ফেরায় এবং তারা কেউ ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা ঝুলে যায়।
এরপর গত মাসে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের বৈঠকে প্রত্যাবাসন চুক্তির অংশ হিসেবে যাচাই বাছাইয়ের জন্য মিয়ানমারের হাতে ২৫ হাজার রোহিঙ্গার নতুন একটি তালিকা দেয় বাংলাদেশ।
তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তালিকা থেকে ৩ হাজার ৫৪০ জনকে নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের ছাড়পত্র মিলেছে। এখন এই রোহিঙ্গা রাজি হলেই তাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মিন্ট থু টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেন, “আমরা ৩ হাজার ৫৪০ জনকে আগামী ২২ অগাষ্ট ফেরত নিতে রাজি।”
এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, এটা প্রত্যাবাসনের ছোট আকারের একটি পরিকল্পনা।
তবে রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের ফেরত পাঠানো হবে না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যেন স্বেচ্ছায়, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে হয় এবং তা যেন টেকসই হয়।”
এই প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যুক্ত করা হয়নি বলে দাবি করেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউমেন রাইটসের কর্মী মোহাম্মদ ইলিয়াস।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। মিয়ানমার সরকার ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, রোহিঙ্গারা এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত নয়।
মিয়ানমার সরকারের মতে, রোহিঙ্গারা হলো বাংলাদেশি, যারা বর্তমানে অবৈধভাবে মিয়ানমারে বসবাস করছে। যদিও ইতিহাস ভিন্ন কথা বলে। ইতিহাস বলে, রোহিঙ্গারা মিয়ামারে কয়েক শতাব্দী ধরে বসবাস করে আসছে।