বিএনপি-জামায়াতের ১৯ নেতাকর্মী আটক
স্টাফ রিপোর্টার
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রবিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করছে বিএনপি-জামায়াত। সকালে সিলেটে ঢিলেঢালা হরতাল থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তপ্ত হতে শুরু করে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় বিএনপি-জামায়াতের। এসময় ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
সকাল ৮টার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে অতর্কিত পিকেটিং করেছে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সঙ্গে আছে জামায়াতও। তারা ভাঙচুর করছেন যানবাহন। পুলিশের দিকে ছুঁড়ছেন ইট-পাটকেল। তবে পুলিশও তাদের ঠেকাতে কঠোরভাবে মাঠে ছিলো। যে স্থানেই বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন সেখানেই উপস্থিত হয়ে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় তাদের।
জানা গেছে, সিলেট মহানগরীর জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে পিকেটিং করছে আন্দোলনকারীরা।
অপরদিকে, জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজার এলাকায় হরতালবিরোধী মিছিল করছে ছাত্রলীগ। এর আগে বেলা ১১টার দিকে বন্দরবাজারে শান্তিসমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। থমথমে এই পরিস্থিতিতে প্রস্তুত ছিলো পুলিশ ও র্যাব।
এদিকে,সিলেটে হরতালে পিকেটিংকালে জামায়াত-বিএনপি ও তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৮ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ (পিপিএম)।
আটককৃতরা হলেন- রবিবার হরতাল চলাকালে এবং হরতালের আগের রাতে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ফখরুল ইসলাম ফারুক, মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা যুবদল নেতা মোঃ আব্বাস, জেলা ছাত্রদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল আহমদ। অপর আটককৃত সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি জামায়াতের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
জালালী পংকীকে আটকের বিষয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন- রবিবার দুপুরে মহানগরীর ভাতালিয়াস্থ নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়েছে।
স্থানে স্থানে পিকেটিংয়ের কারণে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক যানশূন্য হয়ে পড়ে। নিরাপত্তার অজুহাতে পরিবহন শ্রমিকরাও সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। সিলেট থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস। আঞ্চলিক সড়কগুলোতেও ছিলো না গণপরিহন। এতে জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া লোকজন পড়েন বিপাকে। অনেকেই পায়ে হেঁটে যান তাদের গন্তব্যে।
সকাল ১০টার দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়- সেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে বাসগুলো। এসময় পরিবহন শ্রমিকরা বলেন- যাত্রী নেই। রাস্তায় বেরোলে গাড়ি ভাঙচুরে আশঙ্কা রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে গাড়ি বন্ধ রেখেছি আমরা। এদিকে, ব্যক্তিগত গাড়িও সিলেটে রাস্তায় খুব কম বের হয়েছে।
সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ, টায়ারে আগুন:
রবিবার সকাল ১০টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারে গাছ ফেলে অবরোধ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কোহিনূর আহমদ ও সহ দপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম। এছাড়া প্রায় একই সময়ে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার তেতলিতে টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যানবাহন ভাঙচুর:
সকাল ৯টার দিকে মহানগরের লন্ডনি রোডের হাজীপাড়ার মুখ থেকে ৩০-৩৫ টি মোটরসাইকেলে করে বিএনপি নেতাকর্মীরা বের হয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে গিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ১০-১২টি গাড়িতে ভাঙচুর চালান। তাদের অনেকের হাতে ছিলো লাঠি। ১৫-২০ মিনিট ভাঙচুর চালিয়ে তারা চলে যান।
জিন্দাবাজারে পুলিশ-বিএনপি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া:
মহানগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশের দিকে নেতাকর্মীরা ইট-পাটকেল ও তাদের দিকে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ এসময় সাউন্ড গ্রেনেডও ফাটায়।
জেলরোড পয়েন্টে ককটেল বিস্ফোরণ :
সিলেট মহানগরের জেলরোড পয়েন্টে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। রবিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থল থেকে গণমাধ্যকর্মীরা জানান- মহাজনপট্টির গলি থেকে ২৫-৩০ জন বিএনপি নেতাকর্মীল মিছিল নিয়ে জেল রোড পয়েন্টে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এসময় তারা পিকেটিং শুরু করেন। তবে দ্রæত পুলিশ ঘটনাস্থলে চলে আসে এবং রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় পুলিশের দিকে ইট-পাটকের নিক্ষেপ করেন নেতাকর্মীরা। তবে বেশিক্ষণ রাস্তায় দাঁড়াননি তারা। মিছিল নিয়ে জেলরোডের দিকে চলে যান।
জিন্দাবাজার :
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সিলেট মহানগরের জিন্দাবাজারে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে পিকেটিং করার চেষ্টা করলে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। জিন্দাবাজার পয়েন্ট ও কাজি ইলিয়াস এলাকায় সড়কে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাঁতিপাড়ার গলি থেকে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী হঠাৎ বের হয়ে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। তবে পুলিশের ধাওয়ায় তারা দাঁড়াতে পারেনি রাস্তায়। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের দিকে রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এসময় পিকেটিংকারী একজনের ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেল পুলিশ জব্দ করে।
দরগাহ গেইটে রিকশায় আগুন, সাংবাদিকের মোটরসাইকেল ভাঙচুর :
সিলেট মহানগরীর রিকশায় আগুন দিয়ে পিকেটিং করছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। রবিবার সকাল ১০টার দিকে মহানগরীর দরগাহ গেইট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় সাংবাদিকের মোটরসাইকেলেও ভাঙচুর চালায় তারা।
হরতালের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মোঃ ইলিয়াস শরীফ বিপিএম (বার) পিপিএম বলেন- সিলেটের জনগণের সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা মাঠে রয়েছি। হরতালকে কেন্দ্র করে কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে আমরা কঠোরভাবে তা দমন করবো। গতকাল ভোর থেকে আমাদের মোবাইল টিম, সিআরটি ও সাদা পোশাকে একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে পুলিশের সাজোয়া যান পিসিআর।
সিলেট হরতালে দোকানপাট বন্ধ:
বিএনপির ডাকা হরতাল চলাকালে রবিবার এলাকায় হাতেগুণা কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনিয় দ্রব্য সামগ্রীর দোকান অর্ধেক খোলা রেখে দোকানীদের দেখা গেছে। অপরদিকে সিলেট থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস। আঞ্চলিক সড়কগুলোতেও চলছে না গণপরিহন। নগরীতে হালকা চলাচল করছে রিকশা ও অটোরিকশা। সরেজমিনে নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, মিরাবাজার, লামাবাজার, শিবগঞ্জ, টিলাগড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ দেখা গেছে। তবে ওষুধসহ কিছু জরুরি প্রয়োজনীয় দোকান খোলা দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। শনিবার ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়া পল্টনে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ছিল। কিন্তু রাজধানীর জায়গায়-জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দলটি। দলটির একদল কর্মী প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এ সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও ৪১ জন, ২০ জন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। এদিকে, বিএনপি বলছে তাদের সহস্রাধিক কর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের পর মহাসমাবেশ স্থগিত করে রবিবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি দেয় বিএনপি।
সুনামগঞ্জ:
সারাদেশব্যাপী ডাকা বিএনপির সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে সুনামগঞ্জ সিলেট আঞ্চলিক মহা সড়কের পাগলা বাজার এলাকায় পিকেটিং চলাকালে শান্তিগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহŸায়ক সুহেল মিয়া, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেন কামরান, সিনিয়র যগ্ম আহŸায়ক ওবায়দুল করিম মাসুম ও ছাত্রদল নেতা আবু তাহের ইমনসহ ৫ জনকে আটক করেছে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ। অপর একজনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজারে হরতালের সমর্থনে পিকেটিংকালে তাদের আটক করে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ। হরতালের নামে নাশকতা ঠেকাতে তাদেরকে আটক করা হয়েছে বলে জানায় শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ।
আটককৃত নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি আনছার উদ্দিনের অনুসারী বলে জানা গেছে।
যুবদল-ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মীকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী বলেন, হরতালের নামে নৈরাজ্য ঠেকাতে এবং জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থেই তাদের আটক করা হয়েছে।
জগন্নাথপুরে ঢিলেঢালা হরতাল, রাজপথ আ.লীগের দখলে
জগন্নাথপুর:
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বিএনপির ডাকা হরতাল ঢিলেঢালা ভাবে পালন হয়েছে। হরতালের কারণে ২৯ অক্টোবর রোববার সকাল থেকে দুর পাল্লার যাত্রীবাহী ও মালবাহী ভারি যানবাহন চলাচল করেনি। এতে যাত্রী ভোগান্তি হয়েছে। এছাড়া আর সব কিছু স্বাভাবিক ছিল। হরতালের সমর্থনে পিকেটিং বা কোন কর্মসূচি পালন হয়নি। রাজপথে দেখা যায়নি বিএনপির কোন নেতাকর্মীদের। কার্যত-রাজপথ ছিল আ.লীগের দখলে। যদিও হরতালের বিরুদ্ধে ও শান্তির পক্ষে জগন্নাথপুর উপজেলা আ.লীগের বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলীয় কার্যালয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ জেলা আ.লীগের উপদেষ্টা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ সিদ্দিক আহমদ। পথসভায় বক্তব্য রাখেন, জগন্নাথপুর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু। এতে উপজেলা আ.লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আনহার মিয়া, আবদুল কাইয়ূম মশাহিদ, সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক লুৎফুর রহমান, সুজিত কুমার রায়, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন, জগন্নাথপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাফরোজ ইসলাম মুন্না, আশারকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ূব খান, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল মুকিত প্রমূখ সহ সর্বস্তরের দলীয় নেতাকর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন।
মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে জামায়াতের ৬ নেতা-সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (২৯ অক্টোবর) রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের গুলিস্থান পয়েন্টে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে পৃথক এক অভিযানে উপজেলার সুজানগর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতে দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের গুলিস্তান পয়েন্টে চেক পোস্ট বসিয়ে দায়িত্বপালনকালে জামায়াতের নেতা-সমর্থকরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে জামায়াতের ৫ নেতা-সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি লুৎফুর রহমান (৫৮), বড়লেখা সদর ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম (৩০), একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি আছার উদ্দিন (৩৪), দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন জামায়ত নেতা ও ইউপি মেম্বার মো. আলিম উদ্দিন (৫২) এবং জামায়াত সমর্থক নানু মিয়া (৩০)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, রবিবার বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালে জননিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের গুলিস্তান পয়েন্টে চেক পোস্ট বসিয়ে বড়লেখা থানার এসআই মোঃ মাসুদ পারভেজ জমাদার, এসআই স্বপন কান্তি দাস ও এএসআই আবু তালেবসহ একদল পুলিশ দায়িত্ব পাল-ন করছিল। শনিবার রাত আনুমানিক তিনটায় বিএনপি-জামায়াতের ২০-২৫ জন নেতা-সমর্থক ঢাকায় বিএনপি ও জামায়াতের সমাবেশ শেষে বাসযোগে এসে দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের গুলিস্তান পয়েন্টে নামেন। এসময় পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা করে। পুলিশ তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে এসআই স্বপন কান্তি দাস ও এএসআই আবু তালেব হাতে আঘাত পান। এই বড়লেখা থানার এসআই মো. মাসুদ পারভেজ জমাদার পাঁচজনের নামোল্লেখ এবং ২০-২৫জনকে অজ্ঞাতানামা আসামি করে মামলা করেন। অন্যদিকে পৃথক এক অভিযানে উপজেলার সুজানগর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বড়লেখা থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান রবিবার বিকেলে বলেন, দায়িত্বপালনকালে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে জামায়াতের ৫ নেতা-সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রবিবার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় রেললাইনের ওপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ফেলে রেখে ট্রেন চলাচল বিঘিœত করার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাতে উপজেলার ছকাপন রেলস্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে ট্রেন থামিয়ে চালক ও যাত্রীদের সহায়তায় আগুন নেভানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুলাউড়া রেলওয়ের স্টেশনমাস্টার মোঃ রোমান আহমদ।
তিনি জানান, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দুর্বৃত্তরা একটি টায়ারে আগুন ধরিয়ে ছকাপন রেলস্টেশন এলাকায় রেললাইনের ওপর ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সুরমা মেইল এক্সপ্রেস ওই এলাকায় পৌঁছালে রেললাইনে আগুন দেখে চালক ট্রেন থামিয়ে দেন। পরে চালকসহ যাত্রীরা নেমে আগুন লাগানো টায়ারটি রেললাইন থেকে সরালে ট্রেনটি তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে তদন্ত চলছে বলে জানান কুলাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিহির রঞ্জন দেব।
হবিগঞ্জ:
বিএনপি জামায়াতের ডাকা হরতালের সমর্থনে হবিগঞ্জে রাস্তায় টায়ারে আগুণ ধরিয়ে এবং গাছ ফেলে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদল যুবদলসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা। ঘটেছে যুবলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে।
জানা যায়, রবিবার সকাল ৯টার দিকে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় রাস্তায় টায়ারে আগুণ দিয়ে পিকেটিংয়ের চেষ্টা করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এসময় পুলিশ তাদেরকে ধাওয়া করলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। এছাড়াও সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে হবিগঞ্জ চুনারুঘাট সড়ক, চুনারুঘাট পৌর শহর, ঢাকা সিলেট পুরাতন মহাসড়কে কলেজ রোড, বাল্লা রোড ও আমতলি রাস্তা সংলগ্ন এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে।
এদিকে, বেলা ১২টার দিকে হবিগঞ্জ শহরের মুসলিম কোয়ার্টার এলাকায় হরতালের সমর্থনে পিকেটিং শুরু করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এসময় যুবলীগের নেতাকর্মীদের সাথে হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। ঘটে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা। ভাংচুর করা হয় একটি টমটম অটোরিক্সা। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে।
অপরদিকে, রবিবার সকাল থেকে হরতালের কারণে জেলা শহর থেকে দুরপল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও শহরসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে ছোট খাটো যানবাহন চলাচল করছে নির্বিঘেœ। বড় ধরণের কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়াও জামায়াত বিএনপির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে হবিগঞ্জ শহরে শান্তি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামীলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি বলেন, শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।