কাজির বাজার ডেস্ক
পোলিওমাইলিটিজ এক ধরনের ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এটি পোলিও নামেই পরিচিত। এক সময় গোটাবিশ্বে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করেছিল এই ভাইরাস। যে কারণে বিকলাঙ্গ বা পঙ্গুত্ববরণ করে মারা গেছে বহু মানুষ। বাংলাদেশে সর্বশেষ ২০০৬ সালে ১৮ জন পোলিও রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে দেশে এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া না গেলেও বিশেষজ্ঞরা শঙ্কার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তারা বলছেন, এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতার বিকল্প নেই। বিশ্ব পোলিও দিবস ২৪ অক্টোবর। এবার দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য ‘টিকা নিরাপদ এবং জীবন বাঁচায়’। দিবসটি ঘিরে বিভিন্ন দেশে সচেতনতার কর্মসূচি পালন করা হয়। এ রোগ নিয়ে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিøওএইচও) তথ্য বলছে, ১৯৮৮ সালে সারাবিশ্বে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৮৮ হাজার। ২০০৫ সালে ছিল দুই হাজার। ২০১৪ সালে ভারত, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ১১টি দেশকে পোলিও মুক্ত ঘোষণা করে সংস্থাটি।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকে। অনেকগুলো লক্ষণের মধ্যে গুরুতর হলো-জ্বর, শ্বাসকষ্ট শেষে পক্ষাঘাত বা পঙ্গুত্ববরণ। আক্রান্তের হার বেশি হলে নানা জটিলতাসহ মৃত্যু হয় এ রোগীর।
এই ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢুকলে পরবর্তী কয়েকমাস তার মল-মূত্রের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। সেকারণে পোলিও আক্রান্ত কোনো মানুষ এক অন্য দেশ থেকে অন্য দেশে গেলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এ রোগ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইপিআই টিকাদান কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে নবজাতক শিশুদের পোলিওর মুখে খাওয়ার টিকা ও ইনজেকশনের মাধ্যমে টিকা দেওয়া হয়ে থাকে। সারাদেশে পোলিও নির্মূল ও ভবিষ্যতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব যাতে না ঘটে এ লক্ষে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের আওতায় ন্যাশনাল পোলিও, মিজেলস ও এমইএস ল্যাবরেটরি বাংলাদেশে পোলিও নজরদারির কাজ করে।
পোলিও রোগ সম্পর্কে সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে কথা হয় ন্যাশনাল পোলিও, মিজেলস (হাম) ও এমইএস ল্যাবরেটরির প্রধান ভাইরোলজিস্ট ডা. কেএইচ মাহবুবা জামিলের। তিনি জানান, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার ১১টি দেশ পোলিও মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এর আগে প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ জনের মতো প্যারালাইসড পোলিও রোগী পাওয়া যেত। তবে ২০০০ সালের পর দীর্ঘদিন দেশে এ ধরনের রোগী পাওয়া যায়নি। ২০০৬ সালে পোলিও মুক্ত ঘোষণা করার সময় আসলেও সে বছর হঠাৎ করেই দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৮ জন পোলিও রোগী পাওয়া যায়। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফলে এরপর থেকে আর পোলিওর কোনো রোগী পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে কিছু পোলিও রোগী পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি বছর এখনও দুই থেকে তিনজন রোগী পাওয়া যায়। এতে করে বিশ্বকে এখনও পোলিও মুক্ত ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশে ইপিআই কর্মসূচির কার্যকরী টিকা কর্মসূচির ফলে দেশে পোলিও নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইপিআই কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. তানভীর রহমান বলেন, পোলিও ভাইরাস সবচেয়ে বড় ভাইরাসগুলোর মধ্যে একটি। এই ভাইরাস স্নায়ু টিস্যুর মাধ্যমে গিয়ে ব্রেইনে আঘাত করে। আর এটি ব্রেইনের মাধ্যমে পায়ে আক্রান্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে এটুকুতেই হয়তো সীমাবদ্ধ থাকে। আবার অনেক সময় তা পুরো শরীরকেই আক্রান্ত করে ফেলে। এতে আক্রান্ত অঙ্গ ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে এবং পরে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। পেশি অবশ হলে শ্বাস বন্ধ হয়ে শিশু মারাও যেতে পারে।
ডা. তানভীর রহমান বলেন, পোলিওর একমাত্র প্রতিরোধ হলো চার ডোজ পোলিও টিকা খাওয়ানো। এটি শিশুকে পোলিও রোগ থেকে রক্ষা করবে। সাধারণত শিশু জন্ম নেওয়ার পরপরই ৪২ দিনের মাঝে পোলিও টিকার প্রথম ডোজটি দেওয়া হয়, এবং পরের ডোজটি দেওয়া হয় ৪ মাস বয়সে। তৃতীয় ডোজ দেওয়ার দিন-তারিখ নির্ভর করে টিকার ধরনের ওপর। তবে এ ডোজটি ৬ থেকে ১৮ মাসের মধ্যেই দেওয়া উচিত। ৪ থেকে ৬ বছরের মাথায় একটি বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও ১৪ দিন বয়সের মাঝে জিরো ডোজ হিসেবে পোলিও টিকা দেওয়া হয়। অনেকে এ টিকা নেয় না।