আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচংয়ে পাঁচ হাজারের বেশি হেক্টর জমির আমন পানির নিচে

57

স্টাফ রিপোর্টার

কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলার ৫ হাজারের বেশী হেক্টর জমির রোপা আমন ধান ও সবজি ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানি বাড়তে থাকায় ফসলের চিন্তায় দিন পার করছেন এই দুই উপজেলার কৃষকরা। তবে পানি নামার পর ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা:
গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বিভিন্নস্থানের মতো হবিগঞ্জেও টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এরই মাঝে আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর রোপা আমন পানির নিচে চলে গেছে। হাওর বেষ্টিত এই উপজেলায় পানি আরও বাড়ার শঙ্কায় দিন কাটছে কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, উপজেলায় ৭ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ করা হয়েছে। শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার সদর ইউনিয়নের ২৬০ হেক্টর নিমজ্জিত ও ১১০ হেক্টর আংশিক নিমজ্জিত, বদলপুর ইউনিয়নের ৯০০ হেক্টর নিমজ্জিত ও ১২০ হেক্টর আংশিক নিমজ্জিত, জলসুখা ইউনিয়নে ৯০০ হেক্টর ও ৯০০ হেক্টর আংশিক নিমজ্জিত, কাকাইলছেও ইউনিয়নে ৪৮০ হেক্টর নিমজ্জিত, শিবপাশা ইউনিয়নে ৩৭৫ হেক্টর নিমজ্জিত ৭৫ হেক্টর আংশিক নিমজ্জিত ও পৌরসভায় ১১০ হেক্টর নিমজ্জিত ও ৫০ হেক্টর আংশিক নিমজ্জিতসহ মোট ৪ হাজার ২৮০ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে। এদিকে পানি বাড়তে থাকায় ফসলের চিন্তায় দিন পার করছেন উপজেলার হাজারও কৃষক। পাঁচ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় অর্ধেকেরও বেশি রোপা আমন তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, রোপা আমন আবাদের জন্য তারা লগ্নি করে অর্থ নিয়েছেন। যা ফসল তোলার পর শোধ করার চুক্তি ছিল। কিন্তু টানা বর্ষণে প্রতিটি কৃষকের ঘরে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
জলসুখা গ্রামের কৃষক বাহার মিয়া বলেন, তার প্রায় ১০ বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তার পাশে এমন আরও কয়েকজন কৃষকের জমি তলিয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. লুৎফে আল মুঈজ বলেন, শনিবার দুপুর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মোতাবেক ৪ হাজার ২ শত ৮০ হেক্টর জমি নিমজ্জিত ও আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে বলে সর্বশেষ তথ্য আমরা পেয়েছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। পানি নামলে ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাবে।
বানিয়াচং উপজেলা: গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে বানিয়াচংয়ের হাজারো হেক্টর জমির রোপা আমন ধান ও সবজি ক্ষেত। গত বুধবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন রোপা আমন ও শীতকালীন আগাম সবজি চাষীরা। বর্ষা মৌসুম পেরিয়ে গেলেও দেখা মেলেনি কাঙ্খিত বৃষ্টির। আবহাওয়ার এই বৈরীতায় আমন চাষ নিয়ে সংকটে পড়েছিলেন কৃষকরা। কিন্তু টানা দুই থেকে তিনদিনের ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কৃষকদের সেই স্বপ্ন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বানিয়াচংয়ে ৮হাজার ৪’শ ৫৮হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রার অধিক চাষাবাদ করা হয়েছে। রবি মৌসুমে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৪শ’ ৫৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৬৫ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টানা বর্ষণে হরিফা, চিনাউরি, দিঘলোন, বুলিয়া, মাউতপুর, দুর্গাপুর, আলীপুর, নিশং, দৌলতপুর, ভাটি ধুইল্যা, ভাটি ধুম্বন, ভাটি গঙ্গাজল, ধারার পাড়, হরমাইন্নার হাওড়সহ অনেক এলাকায় হাজারো হেক্টরে আমনের চারা পানিতে তলিয়ে গেছে। অপরদিকে আর্থিক মুনাফা লাভের আশায় বাড়ির আশ-পাশে শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মূলা, কাঁচামরিচ, টমেটো, বরবটি, বেগুন, পালংশাক, লালশাক ও লাউ আগাম সবজি চাষ করছিলেন কৃষকরা। কিন্তু কয়েকদিনের টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে বেশির ভাগ সবজির জমি। উপজেলার তকবাজখানী গ্রামের কৃষক আব্দুল আহাদ মিয়া বলেন, অনেক কষ্ট করে বাড়তি দামে তেল ও সার কিনে ৭হেক্টর জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সেই জমি এখন পানির নিচে। যদি দুই একদিনের মধ্যে পানি না নামে তাহলে ধানের চারা নষ্ট হয়ে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। উপজেলার মাতাপুর গ্রামের কৃষক মুছা মিয়া বলেন, ধার করে প্রায় ৫হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। টানা বৃষ্টিতে সেই জমি এখন পানির নিচে। ধানের চারা দেখা যাচ্ছে না। এই ফসল নষ্ট হলে নিঃস্ব হয়ে যাবো। উপজেলার তারাসই ও মজলিশপুর গ্রামের মোঃ নবী হুসেন এবং ইসা মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামসহ আশপাশের এলাকার অনেক কৃষকের রোপা আমন, টমেটো, মূলা, ঝিঙে, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, খিরাসহ বেশ কিছু আগাম সবজির ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। আমরা কিভাবে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেব ভেবে পাচ্ছি না! উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ এনামুল হক বলেন, ফসলের জন্যে এই সময় বৃষ্টিটা অনেক প্রয়োজন ছিলো। তবে অনাকাঙ্খিত টানা বর্ষণে কৃষকদের প্রায় ১হাজার ৭০হেক্টর জমি ও ৫০হেক্টর জমির আগাম সবজি ক্ষতি হয়েছে। তবে যদি বৃষ্টি আর না হয় এবং দ্রæত পানি নেমে যায়, তাহলে ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। ডুবে যাওয়া ক্ষেতের পানি নেমে গেলে পরবর্তীতে ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষকদের রবিশস্য চাষাবাদ করে ক্ষতির কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবে বলে জানান তিনি।