কাজির বাজার ডেস্ক
আগামী ১ নভেম্বর থেকে নির্বাচনকালীন সরকারের কাউন্টডাউন শুরু হবে। এর আগেই অক্টোবর ঘিরে দেশের রাজনীতিতে ছড়াচ্ছে নানা ডালপালা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ আছে প্রায় সব মহলে। বিশেষত ক্ষমতাসীনরা মনে করছেন, সামনের তিনমাস তাদের ‘অগ্নিপরীক্ষা’। রাজপথে বিরোধীদের মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক সতর্কতার অংশ হিসেবে প্রয়োজনে রাস্তায় কিংবা মসজিদে থাকার প্রস্তুতি নিতেও বলা হচ্ছে নেতাকর্মীদের। তবে এমন পরিস্থিতিতেও সংঘাতে জড়াচ্ছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল। সংসদীয় আসনগুলোতে বিভক্তি বাড়ছে বিভিন্ন গ্রæপ ও সাব-গ্রæপে।
যদিও দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে বলছেন, আওয়ামী লীগের মতো এত বড় দলে তৃণমূলে কিছুটা সংঘাত হচ্ছে, হবে- এটা স্বাভাবিক। তবে এসব সমস্যা কাটিয়ে আওয়ামী লীগ সব আসনে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সভায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সামনে কঠিন সময়, জুঁই ফুলের গান গেয়ে লাভ নেই। সময়ের সঙ্গে বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে। অ্যাকশনমুখী ইশতেহার লাগবে। ‘যেমন কুকুর তেমন মুগুর’ স্টাইলে ইশতেহার করেন। সংকট মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸানের মধ্যেও দেশের নানা জায়গায় সংঘাতে জড়াচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। সবশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর মুন্সিগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুগ্রæপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাসকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে একটি পক্ষ। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পর্যায়ে সব ওয়ার্ডে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। একই দিন (২৯ সেপ্টেম্বর) রংপুরের মিঠাপুকুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের দুগ্রæপের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।
এর ঠিক একদিন আগেই গত ২৮ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার লাকসামে শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে অর্ধডজন নেতাকর্মীকে কুপিয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্যের শ্যালক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোহাব্বত আলীর নেতৃত্বে একটি গ্রæপ। এ ঘটনায় সাবকে ছাত্রলীগ নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর নরসিংদী সদর উপজেলার চরদিঘলদীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত সাতজন টেঁটাবিদ্ধ হন। এছাড়া সারাদেশে অধিকাংশ সংসদীয় আসনে দলের অভ্যন্তরে বিভক্তি প্রকট আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় নেতাদের অনেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আগেই নিজেদের শক্তির জানান দিতে বিভাজিত হচ্ছেন। এতে সর্বোপরি দুর্বল হচ্ছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল।
সম্প্রতি ঢাকায় এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, সামনের তিন মাস আমাদের অগ্নিপরীক্ষা। ওরা (বিরোধীরা) অগ্নিসন্ত্রাস করবে, ষড়যন্ত্র করে সরকার হটাতে চাইবে। এসব বিষয়ে আমাদের সদা সজাগ থাকতে হবে। ওদের মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। এমনও হতে পারে আগামী তিন মাস আমাদের রাস্তায় থাকতে হতে পারে। মসজিদেও ঘুমাতে হতে পারে। সবাইকে সেরকম প্রস্তুতি নিতে হবে।
তবে জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে দলের তৃণমূল পর্যায়ের বিভক্তি নিয়ে প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, নির্বাচনের বাকি মাত্র দু-তিন মাস। এখনো কেন তৃণমূল গোছাতে পারেনি আওয়ামী লীগ? নির্বাচন সামনে রেখে দ্রæত সময়ের মধ্যে কীভাবে এ পরিস্থিতি সামাল দেবে দলটি? এসব প্রশ্ন নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে কড়া নাড়লে তাদের অনেকের সাফ জবাব, আওয়ামী লীগের মতো বৃহৎ রাজনৈতিক দলের জন্য এগুলো সমাধানযোগ্য বিষয় নয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। তার এক নির্দেশে সব বিভক্তি মিটে যাবে।
তৃণমূলের বিভক্তি নিয়ে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, আওয়ামী লীগ একটা বটগাছ, পাহাড় সমান। সারাদেশে তৃণমূলে টুকটাক দু-একটা ঘটনা ঘটলে, সেটা জাতীয় রাজনীতি বা জাতীয় নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল- আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুদৃঢ় ও অবিচল নেতাকর্মীরা। এখানে শেখ হাসিনার বাইরে কিছু নেই। নেত্রীর এক নির্দেশে নির্বাচনে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমাদের দলটা ট্র্যাডিশনাল। এর শেকড় খুব গভীরে। তৃণমূলের দু-এক জায়গায় সংঘাত বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এটা কিন্তু সারাদেশের চিত্র নয়। তবে এগুলোও কাক্সিক্ষত নয়। এগুলো নিয়ন্ত্রণ এবং দোষীদের সাংগঠনিকভাবে বিচারের আওতায় আনার সংস্কৃতি আওয়ামী লীগের আছে।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘পৃথিবীর যে প্রান্তেই তিনজন বাঙালির উপস্থিতি, সেখানেই দুটি গ্রæপের অস্তিত্ব আছে। আওয়ামী লীগ বাঙালির আপন রাজনৈতিক দল। সুতরাং এখানে গ্রæপিং থাকবে না এটা আশা করাই ভুল। তবে আদর্শিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ হানাহানি অনেক কম, বরং প্রতিযোগিতা বেশি। তৃণমূলে যেসব বিভক্তির কথা বলা হচ্ছে এগুলো আসলে প্রতিযোগিতামূলক গ্রæপিং। জাতীয় নির্বাচন বা সম্মেলন ঘনিয়ে এলে এসব গ্রæপিং চাঙ্গা হয়ে ওঠে। কখনো কখনো কদর্য রূপ নেয়। দলের শীর্ষ নেতারা বরাবরই এগুলো সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় প্রশমন করেন।’
তিনি বলেন, ইদানীং যারতার এমপি হওয়ার খায়েশ জাগছে। যত্রতত্র কিছু বিলবোর্ড টানিয়ে, দু-চারটি হাট-বাজারে হ্যান্ডশেক করে ছবি তুলে কিংবা পাড়া প্রতিবেশী ও গ্রামবাসীর বিভিন্ন দল করা কিছু লোক ম্যানেজ করে দু-চারটি পথসভা করে সেসব ছবি ফেসবুকে আপলোড করে এবং বিভিন্ন কায়দায় মফস্বল সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে অনেকে নিজেদের জনপ্রিয় হিসেবে জাহির করতে চাচ্ছে। এ ধরনের প্রবণতা কোথাও কোথাও সহিংসতার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। আমরা এগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। অভ্যন্তরীণ এসব সমস্যা কাটিয়ে সব আসনে ঐক্যবদ্ধভাবেই নির্বাচন করবে আওয়ামী লীগ।