ইতিহাসের ভয়াবহতম নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ১৯তম বার্ষিকী পালিত হয়েছে শ্রদ্ধাবনতচিত্তে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় ৪০০ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করার এই নৃশংস তৎপরতা নজিরবিহীন, ঘৃণ্য এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। দীর্ঘ ১৪ বছর পর আলোচিত এ হামলার রায় হয়েছে। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ওই ঘটনায় বিচারিক আদালত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদÐ দেন। একই সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদÐ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদÐ দেয়া হয় অপর ১১ আসামিকে। পরে ওই বছরের ২৭ নভেম্বর এ মামলার বিচারিক আদালতের রায় প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় এসে পৌঁছে। হামলার মূলহোতা ও বাস্তবায়নকারী ১৯ জনকে বিচারিক আদালতের দেয়া মৃত্যুদÐের রায়ের ওপর হাইকোর্টে বাধ্যতামূলক ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য প্রায় প্রস্তুত। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এ কথা জানান। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের ১০ থেকে ১২টি শুনানি লাগতে পারে। চলতি অক্টোবরের মধ্যে হাইকোর্টের রিভিউ শেষ হতে পারে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালো অধ্যায়ের পর এ ঘটনা জাতীয় রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে বর্বরোচিত ঘটনা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার এমন পাশবিক চেষ্টা সমকালীন বিশ্ব রাজনীতিতে বিরল। এটা স্পষ্ট, হত্যাকাÐের মূল টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা। এর আগে তিনি বহুবার হত্যার টার্গেট হয়েছিলেন। প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে, তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ঘটনার আলামত নষ্টসহ এমন কোনো কাজ নেই, যা করেনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। জজ মিয়া নামক এক অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আসামি বানানো ছাড়াও শৈবাল সাহা পার্থসহ ২২ জনকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করে সাজানো স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়। এমনকি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নামে মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করা হয়। ওয়ান-ইলেভেনের পর সেনাসমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে সিআইডি প্রকৃত অর্থে তদন্ত শুরু করে এবং ২০০৮ সালে জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও তার ভাইসহ ২২ জনকে আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়। তাতে হামলার জন্য মূলত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ বা হুজিকে দায়ী করা হয়। কিন্তু অভিযোগপত্রে গ্রেনেডের উৎস, মদতদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের সম্পর্কে অনেক কিছুই অস্পষ্ট থেকে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার এসে এর অধিকতর তদন্ত করে। ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এরপর দুই অভিযোগপত্রের মোট ৫২ আসামির মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জনকে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু হয়। অবশেষে রায়ও হয়েছে। এখন দরকার ঘাতকদের রায় কার্যকর করা। পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের হাতে সোপর্দ করার উদ্যোগ নেয়া দরকার সরকারের।