চা-বাগান কর্মীদের জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০২২ সালে শেষ হয় প্রকল্পের কাজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের সুবিধার্থে একটি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনা হয়। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুক‚লে পিকআপটি জমা দেওয়া হয়নি এখনো। অর্থাৎ প্রকল্পটির ক্ষেত্রে সমাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্পের যানবাহন সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের অধীন কেন্দ্রীয় পরিবহন পুলে জমাকরণ, ব্যবহার ও নিষ্পত্তি সংক্রান্ত পরিপত্র অনুসরণ করা হয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলেও মানা হয়নি শৃঙ্খলা। অনুমোদন না নিয়ে কয়েকটি খাতে কম-বেশি খরচ করা হয়েছে, যা পরিকল্পনা ও আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থি বলে জানিয়েছে আইএমইডি। সম্প্রতি প্রকল্পটির সমাপ্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদনে (পিসিআর) এমন তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পরিবহন পুলে যানবাহনটি জমা না দেওয়া হলেও মৌলভীবাজারের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার গাড়িটি ব্যবহার করছেন। খরচ নানা খাতে কম-বেশি হলেও পরে সমন্বয় করা হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক মো. রওশন আলম বলেন, ‘গাড়িটি পরিবহন পুলে জমা না দেওয়া হলেও চিফ ইঞ্জিনিয়ারের আদেশক্রমে মৌলভীবাজারের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এটা ব্যবহার করছেন। কারণ আমাদের অধিকাংশ প্রকল্পই মৌলভীবাজার এলাকায়।’
খরচে অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কয়েকটি খাতে খরচ কম-বেশি হয়েছে। তবে আমরা এটা সমন্বয় করে নিয়েছি। এতে করে কোনো সমস্যা নেই।’ আইএমইডি থেকে জানা গেছে, প্রকল্পটিতে ৪টি খাতে সংস্থানকৃত বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত ৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এছাড়া ২টি খাতের বিপরীতে ৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় কম হয়েছে। এক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তা করা হয়নি। আবার বেশকিছু খাতে ডিপিপির সংস্থানের বিপরীতে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে কম-বেশি করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটির এ পর্যন্ত অর্থবছর ভিত্তিক ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল অডিট কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়নি, যা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থি। তাই শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায় বিবেচনা করে প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে আইএমইডি।
আইএমইডি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, প্রকল্পের আওতায় চা-বাগানগুলোতে পাইলটিং ভিত্তিতে নির্মিত বায়োফিল টয়লেটগুলো নির্মাণের উদ্দেশ্যের বিপরীতে পরিদর্শনকৃত এলাকায় এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। মাঠ পর্যায়ে এগুলোর উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে বলেছে সংস্থাটি। প্রকল্পের আওতায় নির্মিত স্থাপনাসমূহ উপকারভোগীদের ব্যবহার উপযোগী রাখার লক্ষ্যে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করার নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া সুপারিশের আলোকে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আগামী বছরের ২২ জুনের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে আইএমইডিকে জানাতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, দেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়- এ সাত জেলার প্রায় ১৬২টি চা-বাগানে ৩৯ লাখ ৮ হাজার ২৩৮ জন শ্রমিক কাজ করেন। এদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই নারী। দেশের এসব চা-বাগানে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নাজুক ও অপ্রতুল। তাই এর মানবিক দিক বিবেচনায় পরিবেশ রক্ষার মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে উন্নতির জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনের ওপর গুরুত্বারোপ করছে। এ জন্য চা-বাগানে পানি সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘চা বাগানকর্মীদের জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন’ প্রকল্পটি নেওয়া হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে চা বাগানের কর্মীদের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হবে। ফলে তা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভ‚মিকা রাখবে- এ উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল।
প্রকল্পের মূল কাজ ছিল বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণে বাগানগুলোয় ৩ হাজার ৪টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম, রিং ওয়েল অগভীর ও গভীর নলক‚প, অগভীর ও গভীর তারা নলক‚প স্থাপন করা। ১০০টি বায়োফিল টয়লেট নির্মাণ করা। ১০৭টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন স্থাপন। ৯ হাজার ৩৯৮টি স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মাণ। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় বাগানের কর্মী ও তত্ত¡াবধানকারীদের জন্য কারিগরি, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও হাইজিন প্রমোশন বিষয়ে প্রশিক্ষণের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল।