বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফিরলেন ২০ বাংলাদেশি, ফেরত গেলেন ১২০ ভারতীয় নাগরিক

20
বিয়ানীবাজার শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে দু’মাসেরও বেশি আটকে থাকা বাংলাদেশীরা দেশে ফিরছেন।

মাহবুব আহমদ খান বিয়ানীবাজার থেকে :
বিশ্ব ব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে চলমান লকডাউনে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় আটকে পড়া ২০ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে। একইদিন বাংলাদেশে আটকে পড়া ১২০ ভারতীয় নিজ দেশে ফিরে গেছেন। দীর্ঘ প্রায় দুই মাস পর গত বৃহস্পতিবার দেশে ফেরত আসা ও ভারতে ফেরর যাওয়াদের কারণে সরগরম হয়ে উঠে বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থল বন্দরের ইমিগেশন। দুই দেশের সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের যোগাযোগের মাধ্যমে আবেদন করা এসব নাগরিকদের বিশেষ ব্যবস্থায় নিজ নিজ দেশে প্রেরণ করা হয়। আসা যাওয়ার এ প্রক্রিয়া সীমান্ত আইন ও স্থলবন্দরের স্বাভাবিক নিয়মে সম্পাদন করা হয়েছে। এ সময় বিজিবি, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিস্তার ঠেকাতে সতর্কতামূলক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইমিগ্রেশন সুবিধা বন্ধ থাকায় ভারতের বিভিন্ন এলাকায় এসব বাংলাদেশি নাগরিকরা আটকে পড়েছিলেন। এর আগে তারা পড়ালেখা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চিকিৎসাসহ নানা কারণে ভারতে গিয়েছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনা ও বিশেষ ব্যবস্থাপনায় শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষে সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে অবস্থান করার নির্দেশ বাড়ি ফেরত যাবার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে তাদের শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি। একইভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আটকে পড়া ১২০ ভারতীয় নাগরিক শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে ফেরে গেছেন। তবে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টি ভারত সীমান্ত এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্তরা দেখবেন বলেও জানা গেছে।
ভারতের এনআইটি শিলচরে অধ্যয়নরত নাইমুল হক নামের এক বাংলাদেশি নাগরিক বলেন, গত ২০ মার্চ থেকে শিলচরের একটি রেস্টহাউজে আমিসহ আরও কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী লকডাউনে ছিলাম। আমাদের সকলের করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হয়েছে। পরবর্তীতে আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমতি পাওয়ায় আমরা দুই মাস ৮ দিন পর বাংলাদেশে ফিরে এসেছি। তিনি বলেন, বন্দরের কর্মকর্তারা আমাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর প্রথম ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ভারতে ফেরত যাওয়া আয়শা সিদ্দিকা নামের এক ভারতীয় নাগরিক বলেন, ‘প্রায় আড়াই মাসের মতো সময় হয়ে গেল আমি ভারতের আসাম থেকে বাংলাদেশে এসেছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সমস্যা ছাড়াও পরিবারের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। এ নিয়ে তারাও খুব টেনশনে ছিল। পরে আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমতি পাওয়ায় আমরা দুই মাস পর ভারতে ফিরে যাচ্ছি। তিনি বলেন, শেওলা স্থলবন্দর থেকে সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষে আমাদেরকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই ভারতে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলছেন ভারত সীমান্তের কর্মকর্তারা আমাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ দেবেন।
স্থলবন্দেরর মেডিকেল টিমের দায়িত্বে থাকা বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. নয়ন মল্লিক বলেন, বৃহস্পতিবার ভারত থেকে দেশে ফেরা ২০ বাংলাদেশি নাগরিককে শেওলা স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের কোন উপসর্গের উপস্থিতি মিলেনি। পাশাপাশি তারা সকলেই শারিরিকভাবে সুস্থ রয়েছেন।
এদিকে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, চলমান লকডাউনের কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আটকে পড়া ১২০ ভারতীয় নাগরিকের দেশের ফেরত যাবার সবধরনের অনুমতি মেলায় প্রাতিষ্ঠানিক সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।