পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। ফলে সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার লঞ্চঘাট, বড়পাড়া, ইব্রাহিমপুর এসব এলাকায় নতুন করে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের অন্তত ছয়টি গ্রামের সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে দুর্ভোগে পরেছেন ১৫ হাজার মানুষ।
বৃহস্পতিবার সুরমা নদীর পানি বেড়ে ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানায় সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
এদিকে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরা পুঞ্জিতেও বৃষ্টি হচ্ছে। ওই বৃষ্টির পানি উজানের ঢলে নেমে এলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
পাউবোর তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরা পুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৭২ সেন্টিমিটার। নদী হাওরে এখনো পানি বাড়ছে। আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয়দের।
সুনামগঞ্জ লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা সেনু মিয়া বলেন, বৃষ্টিপাত তেমন নাই আমরা ভেবেছিলাম পানি কমে যাবে, কিন্তু আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি পানি আরও বেড়ে গেছে। পানির এত স্রোতের গতি দেখে ভয় লাগছে।
সুরমা নদী পাড়ের বাসিন্দা সিদ্দিকী মিয়া বলেন, ‘কিছুদিন থেকে সুনামগঞ্জে বৃষ্টি চলছে, থামার কোনো লক্ষণ নাই। কয়দিন থেকে কাজ-কাম পাচ্ছি না। কাজ-কাম না পেলে বাচ্চাদের নিয়ে খাব কী?’
সুনামগঞ্জ পাউবোর প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, উজানের ঢল আর বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় নদ-নদীর পানি বেড়েছে। সুনামগঞ্জের ছাতক পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ষোলঘর পয়েন্টেও নদীর পানি বেড়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি হতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে নিম্নাঞ্চল ডুবে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় চরম বিপাকে পড়েছেন জেলার গবাদিপশু লালনপালন করা খামারিরা।
জানা যায়, ঈদুল আজহা কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জের তিন হাজারের বেশি খামারি স্বপ্ন বুনেছিলেন। তাদের আশা ছিল, কোরবানি উপলক্ষে গৃহপালিত পশু বিক্রি করে এবছর লাভের মুখ দেখবেন। কিন্তু টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি বাড়ায় সেই স্বপ্নে এখন ভাটা পড়েছে। তাদের মধ্যে একজন সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দা কাউছার আহমেদ। চলতি বছরের ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২০টি গরু লালনপালন করেছেন। আশা ছিল, গরুগুলো ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হবেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্নে গুড়েবালি। উজানের পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় তিনি এই গবাদিপশু নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন। কাউছার বলেন, গত বছরের ভয়ানক বন্যায় খামারের ৯টি গরু মাত্র তিন লাখ টাকা বিক্রি করতে হয়েছে। এই বছরও গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। চলতি বছরে সুনামগঞ্জে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ৫০ টিরও বেশি গরু-ছাগলের হাট বসার কথা রয়েছে। কিন্তু এরইমধ্যে শতাধিক হাওরে ঢলের পানিতে টইটুম্বুর হয়ে যাওয়ায় গো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
খামারি আরশ মিয়া বলেন, খুব চিন্তায় আছি। নদীর পানি যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে গবাদিপশু কীভাবে হাটে তুলবো সেই চিন্তায় আছি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি বাড়ায় এবং বন্যার শঙ্কা থাকায় এরইমধ্যে সব উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
তিনি জানান, এবছর সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাটে গরু-ছাগলসহ মোট ৪০ হাজার গবাদিপশু উঠবে। যার বাজার মূল্য ৪০০ কোটি টাকা।