কাজিরবাজার ডেস্ক :
বেতন-ভাতার সরকারি অংশ পাওয়ার অপেক্ষায় সারাদেশে বছরের পর বছর টিকিয়ে রাখা তিন শতাধিক দাখিল মাদ্রাসার মধ্যে ২০২টি বন্ধ করা হয় সম্প্রতি। নতুন খবর হলো, বন্ধের তালিকায় রয়েছে আরও ৯৬টি মাদ্রাসা। পাসের হার শূন্য এসব দাখিল মাদ্রাসায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মতো শিক্ষক নেই। এমনকি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ছাত্র নেই এসব প্রতিষ্ঠানে। তবুও চলছে বছরের পর বছর। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বন্ধসহ পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলের তালিকায় নিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রাসা) রওনক মাহমুদ বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর শূন্য পাস নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, শিক্ষক ও ছাত্র নেই, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমপিওভুক্ত মাদ্রাসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়। তবে নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা বোর্ড অধিদফতর।’
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ১০ মে শিক্ষা বোর্ড ৯৬টি দাখিল মাদ্রাসাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছে। এই নোটিশে বলা হয়েছে, ‘২০১৮ সালের দাখিল পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার শূন্য হওয়ায় মাদ্রাসাগুলোর প্রাথমিক পাঠদান স্থগিত, একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (ইআইআইএন) কেন বন্ধ করা হবে না, তা চিঠি পাওয়ার ২১ দিনের (কর্মদিবস) মধ্যে জানাতে হবে।’
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরিদর্শক মো. হোসেন বলেন, ‘যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (দাখিল মাদ্রাসা) এমপিও আছে তাদের এবার কত শিক্ষার্থী পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল আর ২০১৯ সালে কতজন অংশ নেবে তা দেখবো। কারণ আমি দেখেছি, ২৮ জন পরীক্ষা দিয়ে একজনও পাস করেনি। এটা দৈবঘটনা নয়। তাই যদি হয়, তাহলে শিক্ষকের বেতন বন্ধ করা হবে অমানবিক। সেক্ষেত্রে আগামী বছর যদি ১৫ থেকে ২০ জন অংশ নেয় ও বেশিরভাগই পাস করে তাহলে আমরা বিবেচনা করা হতে পারে। এ বিষয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেবো। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড সরাসরি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলে শিক্ষকরা আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। আমরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান (একেএম সাইফুল্লাহ) দেশে ফিরলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
নন-এমপিও মাদ্রাসা বন্ধ করার বিষয়ে এই উপ-পরিদর্শকের ভাষ্য, ‘যাদের এমপিও নেই, তারা ঢিলেঢালা। তবে কারা এমপিওভুক্ত, সেই তালিকা আমাদের কাছে নেই। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর থেকে আমাদেরকে তা জানানো হয় না। তাই কারা এমপিওভুক্ত আর কারা এমপিওভুক্ত নয়, তা আমরা নিশ্চিত নই। তবে প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাদের এমপিও নেই তাদের বিষয়ে বোর্ড নমনীয়তা দেখালেও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘হাতেগোনা দুই-একটি মাদ্রাসা হয়তো ছাড় পেতে পারে। তবুও বোর্ড যদি বিবেচনা না করে সেক্ষেত্রে আইনগতভাবে শোকজ নোটিশ দেওয়া কোনও প্রতিষ্ঠানের পাঠদান, একাডেমিক স্বীকৃতি ও ইআইআইএন নম্বর থাকবে না।’
সূত্র জানায়, ২১ কর্মবিদসের মধ্যে যারা নোটিশের জবাব দিয়েছে, তাদের মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি। ১০ থেকে ২৮ জন পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েও পাস করেনি অথবা দুই-একজন পাস করেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের এমপিও বন্ধ করা হবে। কিছু ছাড় দেওয়া হলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক পাঠদান, একাডেমিক স্বীকৃতি ও ইআইআইএন নম্বর বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানা যায়।
বন্ধের তালিকায় থাকা ৯৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইলের ৯টি, নওগাঁর সাতটি, যশোর, বগুড়া ও সাতক্ষীরার পাঁচটি করে প্রতিষ্ঠান এবং গাজীপুর, দিনাজপুর, পটুয়াখালী,রাজশাহী ও নাটোরের চারটি করে প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া ময়মনসিংহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, জামালপুর ও কুষ্টিয়ার তিনটি করে প্রতিষ্ঠান; সিলেট, বরিশাল,পাবনা, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, মাগুরা ও কুড়িগ্রামের দুটি করে প্রতিষ্ঠান; নরসিংদী, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, ভোলা, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা,জয়পুরহাট, বাগেরহাট,নীলফামারী,ফেনী, পিরোজপুর, বরগুনা, বি.বাড়িয়া, খুলনা, লালমনিরহাট ও রাজবাড়ীর একটি করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে।
সম্প্রতি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার লেমুয়া চন্দ্রকান্দা আলিম মাদ্রাসার অনিয়ম খুঁজতে গিয়ে বদলে গেছে দৃশ্যপট। এই মাদ্রাসার এমপিও বন্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের কাছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যাখ্যা চাওয়ার পর একদিনে বন্ধ করা হয় ২০২টি মাদ্রাসা। সারাদেশের তিন শতাধিক দাখিল মাদ্রাসার মধ্যে হাতেগোনা দু’একটির অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী থাকলেও বেশিরভাগে সেসব নেই। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ন্যূনতম শর্ত পূরণের মতো অবস্থাও দেখা যায় না এসব মাদ্রাসায়। তবুও টিকিয়ে রাখা হয়েছিল এগুলো।