লিবিয়ায় মানব পাচারকারী চক্রের নারীসহ তিন সদস্য

5

 

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি

লিবিয়ায় মানব পাচারকারী চক্রের নারীসহ তিন সদস্যকে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজারের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করেছে দোয়ারাবাজার থানা পুলিশ।। গ্রেফতারকৃতরা হলো উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের বড়খাল গ্রামের লিবিয়া প্রবাসী আব্দুল বারেকের স্ত্রী মোছা. রাজিয়া খাতুন (৪২), উরুরগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের পুত্র শাহজাহান মিয়া(৬৫) ও ভাওয়ালীপাড়া গ্রামের মৃত চান মিয়ার পুত্র মোঃ আবুল কাশেম (৫২)। শনিবার বিকালে দোয়ারাবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেবদুলাল ধর এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মুহাম্মদ আসলাম হোসেন ও দোয়ারাবাজার থানার একাধিক টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ পূর্বক তথ্য সংগ্রহ এবং মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে। শনিবার সকালে আসামীদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
চক্রের লিবিয়া অংশের অন্যতম প্রধান মানব পাচারকারী উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের বড়খাল গ্রামের আব্দুল বারেক দীর্ঘদিন যাবৎ লিবিয়া প্রবাসী। আব্দুল বারেকের নেতৃত্বে চক্রটি লিবিয়ার বন্দীশালায় পাচারকৃত বাংলাদেশি যুবকদেরকে অর্ধাহারে-অনাহারে রেখে নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে লাখ লাখ টাকা আদায় করে বাংলাদেশে অবস্থানরত দালালদের মাধ্যমে। অন্যান্য আসামীরা দেশে ও বিদেশে মানবপাচার চক্রের সাথে জড়িত। উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের ছনুগাঁও গ্রামের মোঃ কোরবান আলীর পুত্র মাহমুদুল হাছান সৌরভ (২২), ভিখারগাঁও গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের পুত্র
সুমন মিয়া (১৯) ও কুশিউড়া গ্রামের ইউসুফ আলীর পুত্র নোমান মিয়া (২২) বারেকসহ দালাল চক্রের মাধ্যমে প্রত্যেকে ৪ লক্ষ টাকার চুক্তিতে বিভিন্ন তারিখে লিবিয়া পাঠান। দালালচক্র ৩জন যুবককে প্রথমে দুবাই তারপর মিশর হয়ে লিবিয়া পাঠায়। লিবিয়া রাষ্ট্রে বেকার অবস্থায় অত্যান্ত দুর্বিসহ জীবনযাপন করতে থাকলে দালাল মোঃ আব্দুল বারেক তিন যুবককে লিবিয়া থেকে উদ্ধার করে ইতালি পাঠানোর জন্য তাদের অভিভাবকদের প্রস্তাব করে। দালাল আব্দুল বারেক প্রতি জনের লিবিয়া হতে ইতালি পাঠানোর জন্য সাত লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ পরবে বলে জানায়। লিবিয়ায় বন্ধি তিন যুবকদের অভিভাবকগণ আব্দুল বারেকে স্ত্রী মোছাঃ রাজিয়া খাতুন আব্দুল বারেকের ছেলে আসামী রেজাউল করিমের হাতে মুরব্বিদের উপস্থিতিতে ৩শত টাকার নন জুডিসিয়াল স্টাম্পে লিখিতভাবে প্রত্যেকে মোট দশ লক্ষ টাকা করে এবং ইউসুফ আলী দশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা সহ সর্বমোট ত্রিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ বুঝাইয়া দেন। সম্পূর্ন টাকা হস্তান্তরের পর দালাল আব্দুল বারেক ৩ যুবককে লিবিয়া রাষ্ট্রের অজ্ঞাত স্থানে নিজের কাছে রাখে। দালালচক্র ৩ যুবককে ইতালি না পাঠিয়ে লিবিয়ায় মানবপাচারকারীর কাছে বিক্রি করে দেয়। আব্দুল বারেকের সহযোগী অজ্ঞাতনামা মানবপাচারকারী চক্র ৩ যুবককে লিবিয়া রাষ্ট্রে অজ্ঞাত স্থানে আটক করিয়া নির্মমভাবে নির্যাতন করছে।
গ্রেফতারকৃত আসামি এবং পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ মোতাবেক উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের ছনোগাও গ্রামের মৃত মোঃ আশ্রাফ আলীর পুত্র মোঃ কোরবান আলী বাদী হয়ে উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের বড়খাল গ্রামের মৃত সৈয়দ আলীর পুত্র লিবিয়া প্রবাসী মোঃ আব্দুল বারেক (৫৪), উরুরগাঁও গ্রামের শাহজাহান মিয়ার পুত্র মানিক মিয়া (৩০), বড়খাল গ্রামের দালাল আব্দুল বারেকের স্ত্রী মোছা. রাজিয়া খাতুন (৪২) ও পুত্র রেজাউল করিম (৩৩), উরুরগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের
শাহজাহান মিয়া (৬৫), ভাওয়ালীপাড়া গ্রামের মৃত চান মিয়ার পুত্র মোঃ আবুল কাশেম (৫২), ডালিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের পুত্র আব্দুল হামিদসহ (৩৫) অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন।