সিন্টু রঞ্জন চন্দ
সিলেট নগরীতে সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। একই পণ্য সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলার বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। নগরীর সোবহানীঘাট কাঁচাবাজার পাইকারি দর থেকে খুচরা বাজার দর ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজিপ্রতি বেশী। শাক-সবজির এমন ঊর্ধ্বধমুখী দামে নিম্ন আয়ের মানুষরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে বাজারে সবজি কিনতে আসা ক্রেতারা রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নগরীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, টমেটো, পেঁপে, বরবটি, করলা, লাল শাক, পুঁইশাক, ডাটা, লতা, পটল, ভেন্ডি, ঝিঙে, কচুমুখি, কাকরুল, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, আলু, বেগুন, লাউ, নাগামরিচ, কাঁচা মরিচ, লেবু, সাতকরাসহ বিভিন্ন রকমারী শাক সবজি উঠেছে বাজারে। এছাড়াও কাঁচা বাজারে রয়েছে স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা। ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি দিয়ে পাইকারদের কাছ থেকে মালামাল কিনে বিক্রি করছেন মহানগরীতে। স্বল্প পুঁজিতে অল্প অল্প করে সবজি কিনে বাসা বাড়ি গিয়েও বিক্রি করছেন তারা।
পাইকারী সবজি বাজার দর থেকে মহানগরীর দক্ষিণ সুরমা, আম্বরখানা, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, বন্দরবাজার, ব্রহ্মময়ী বাজার, মিরাবাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে এবং ভ্যান ও ঠেলাগাড়িতে একই সবজি বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। অর্থাৎ পাইকারী বাজার থেকে হাত বদলেই বেড়ে যাচ্ছে সবজির দর।
নগরীর ব্রহ্মময়ী বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী নজরুল ব্রাদার্সের মালিক নজরুল ইসলাম জানান, আলু ৩৫ টাকা, গত সপ্তাহে আলু কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা কেজি প্রতি, দেশী টমেটো ৬০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, সিম ১৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, তালবেগুন ৫০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস সাইজ বুঝে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঝিঙে ৫০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, শশা ৩০ টাকা, কাচা মরিচ ১০০ টাকা, ধনিয়াপাতা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মিষ্টি লাউ ও আউষা লাউ সাইজ বুঝে ৪০ থেকে ১০০ টাকা, লালশাক ও পুঁইশাক ৪০-৪৫ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, ভেন্ডি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, কচুমুখি ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও সাতকরা পিস ১০-১৫ টাকা টাকা ও লেবু খুচরা বাজারে ৫-১০ টাকা টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কাঁচামালের দর প্রতিদিন উঠা-নামা করে। এছাড়া মৌসুমী স্থানীয় সবজি বাজারে কম আসায় সবজির দাম বেশী।
ব্রহ্মময়ী বাজারে সবজি কিনতে আসা সেলিম মিয়া জানালেন, শাক-সবজির দাম এভাবে বাড়বে চিন্তার বাইরে। ৪০ টাকার নিচে ভালো কোনো সবজিই নেই। আমাদের কৃষিপ্রধান দেশ, কিন্তু এরপরও এত দাম সবজির। আমরা কোথায় যাবো।
আম্বরখানা সবজি বাজারে সবজি কিনতে আসা ফখরুল ইসলাম বলেন, বাজারে এসে তো মাথা ঘুরাচ্ছে রীতিমতো। সবজির দাম দেখে আধা কেজি, আড়াইশ গ্রাম করে সবজি কিনতে হচ্ছে। কম দামে কোনো সবজি নেই বাজারে। এত দাম হলে আমরা নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষ তো সবজিও কিনতে পারবো না।
বন্দরবাজারের সবজি বিক্রেতা মতিন মিয়া জানান, সিলেটে সবজির আমদানী মধ্যস্থানে রয়েছে। আমদানী কম থাকায় বাজারে সবজির দাম বেশী। তবে বাজারে সবজির ঘাটতি নেই। পাইকারী বাজার থেকে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশী। তিনি বলেন, বর্তমানে স্থানীয়ভাবে সবজি বাজারে কম আসায় রাজশাহী, বগুড়া, নরসিংদী, মাধবপুর, ভৈরব, সাতক্ষিরা ও রংপুরসহ উত্তর বঙ্গের জেলা থেকে সিলেটে সবজি আসছে। বিভিন্ন জেলা থেকে সিলেট নগরীতে সবজি আসায় বাজারে সবজির দাম বেশী। এছাড়াও সুনামগঞ্জ থেকে ঝিঙ্গা, বেগুন, কাঁচা মরিচ ও ভেন্ডি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তেলের দাম বাড়ায় গাড়িভাড়া বেড়েছে। আগে ১০০ টাকা ভাড়া লাগতো, এখন লাগে ২ থেকে আড়াইশ টাকা। তাছাড়া দোকান খরচসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে তাই বেশি দামে সবজি বিক্রি করতে হয়।