সিন্টু রঞ্জন চন্দ
ঈদ-উল-আজহার আর মাত্র দেড় মাসের কম সময় বাকি। এরই মধ্যে কুরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে এবার অস্থির হয়ে উঠছে সিলেটের মসলার বাজার। জিরা, ধনিয়া, গোলমরিচ, দারুচিনি, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, তেজপাতার দাম কেজিতে বেড়েছে দ্বিগুণ। অতি মুনাফার আশায় দেড় মাস আগেই কারসাজি শুরু করছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। চক্রটি ধাপে ধাপে দাম বাড়িয়ে বেসামাল করছে মসলার বাজার।
সরবরাহ ঠিক থাকলেও পেঁয়াজ, আদা-রসুন, ধনিয়া, গোলমরিচ, জিরা, দারুচিনি, তেজপাতাসহ একাধিক পণ্যের দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে ভোক্তারা।
নগরীর ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের চেয়ে এখন মসলার বাজারে দাম দিগুণ। পাইকারী বাজার থেকে খুচরা বাজারে কেজি প্রতি দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেশী। কেন এভাবে মসলার দাম বাড়ছে জানতে চাইলেই পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, বিশ্ববাজারে বুকিং রেট বেড়ে যাওয়া, ভারত থেকে আমদানি বন্ধ রাখা এবং সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে মসলার দাম বাড়ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে ভোক্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা কুরবানি ঈদের আগে দাম বাড়াতে পারবে না বলে আগে-ভাগেই মাংসের অত্যাবশ্যকীয় মসলা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। যাতে সরকারের তদারকি সংস্থার চাপে দাম কমাতে হলে মোটা অঙ্কের লাভ রেখে কমাতে পারেন।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে অনেক আমদানি করা পণ্যের দাম যৌক্তিকভাবে বেড়েছে। তবে দেশের বাজারে ব্যবসায়ীরা আদৌ যৌক্তিক দামে বিক্রি করছে কি না তা দেখতে হবে। কারণ কোনো উৎসব এলেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে অসাধুরা ভোক্তাকে ভোগান্তিতে ফেলেন। রোজার আগে আমরা সেটাই দেখেছি। এবার কুরবানির ঈদকে ঘিরে একই কারসাজি শুরু হয়েছে। সিলেট নগরীর খুচরা বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- রবিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ছোটটা ৭৫ টাকা, দেশী বড় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা এবং এলসি বড় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৯০ টাকা দরে। যা এক মাস আগে এসব পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা। যা আগে ২৫০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি চায়না বড় রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা ও দেশী রসুন ১২০ টাকা। যা এক মাস আগে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
নগরীর ব্রহ্মময়ী বাজারের ইরফান ব্রাদার্সের সেলিম আহমদ রবিবার জানান, আগের চেয়ে মসলার দাম বেশী। পাইকারী বাজার থেকে খুচরা বাজারে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশী। তার দোকানে প্রতিকেজি দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা, জিরা প্রতিকেজি ৮০০ টাকা, এলাচ ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা, লং কেজি প্রতি ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা, বাগর ২৫০ টাকা, হববাগর ৪০০ টাকা, কাট্টাবাগর ৪০০ টাকা, গুলমরিচ কেজি প্রতি ১০০০ টাকা, জৈন ৪০০ টাকা, মেথি প্রতিকেজি ২০০ টাকা, প্রতি লিটার সোয়াবিন তেল ১৮৭ টাকা ও সরিষা তেল ৩৬০ টাকা, লবন ব্যান্ড বুঝে প্রতি কেজি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, তেজপাতা আটি বেঁধে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, লাল ডাল বড় ১০০ টাকা ও ছোট লাল ডাল ১৬০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ১১৫ টাকা, চানার ডাল ৬৮ টাকা ও ছোলা কেজি প্রতি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্রহ্মময়ী বাজারের মুদির দোকানী আব্দুস সত্তার রবিবার জানান, প্রতি পিস নারিকেল সাইজ বুঝে ১১০ থেকে ১২০ টাকা, শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ৪২৫ টাকা, কিসমিস ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা ও কাচা হলুদ কেজি প্রতি ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
মসলার বাজারে দাম বাড়তি সম্পর্কে তিনি বলেন, মসলার বাজারে দাম কুরবানির ঈদের আগে খুব একটা কমবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে কিছু দাম-উঠা-নামা হতে পারে। এছাড়া পচন জাতীয় পণ্যের দাম উঠা-নামা করছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তাই আমদানি করা মসলা পণ্যের দাম বাড়ছে। এছাড়া ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এজন্য দেশি পেঁয়াজের দাম বেশি। তবে বাজারে পর্যাপ্ত দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ আছে। ঈদ-উল-আজহাকে সামনে রেখে চীন এবং মিয়ানমার থেকে আদা আমদানি হচ্ছে। তাই দাম আর বাড়ার সম্ভাবনা কম।
রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শ্যামল পুরকাস্তের সাথে এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া আমি এই মুহুর্তে বক্তব্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।