জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ সভাপতি, উপমহাদেশের প্রখ্যাত শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন- এদেশের মানুষ আলেমসমাজের নেতৃত্বে নামাজ আদায় করে, জানাজা পড়ে, অযু শিখে, পাক পবিত্রতার অর্জন বা গোসল শিখে কিন্তু রাজনৈতিকভাবে আলেমদের ইমাম মানে না। আর এটা শুধু জনসাধারণের ডায়বেটিস রোগ নয়, এই রোগ আমাদের মতো আলেমদের মধ্যেও আছে। বহু হুজুর সমাজে রয়েছেন যারা বলেন সিয়াসত করি না মানে আমরা রাজনীতি করি না। আবার আলেমদের মধ্যে আরো কিছু আছেন যারা বলেন গনতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে না তাই গনতান্ত্রিক রাজনীতি করে কী লাভ! এসব যারা করে এদের দেমাগ কতোটুকু সুস্থ আছে আল্লাহ মালুম। মনে রাখবেন, রাজনীতিতে যদি আলেমের উপস্থিতি না থাকে তাহলে এদেশের মেহমান হিসেবে বসবাস করতে হবে। বাড়িঘরের মালিকের মতো এদেশের মালিক আলেমসমাজ এটা বহু আলেম বুঝতেই পারছেন না।
তিনি আরো বলেন, যোগ্য আলেমদের মাধ্যমে জমিয়ত পরিচালিত হয়। জুলুম নির্যাতনের মধ্য দিয়ে জমিয়ত তাঁর ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। ত্যাগ তিতিক্ষা না থাকলে কোনো কিছুই অর্জন হয় না। আওয়াম ও জনগণের মধ্যে জমিয়তের দাওয়াত নিয়ে সবাইকে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। আজকে কাউন্সিলের মাধ্যমে যারা দায়িত্বে আসলেন, আপনারা মনে করবেন না আপনার কোনো কাজ নেই। আলেম প্রতিনিধি বাড়াতে হবে। যতবেশি আলেম জনপ্রতিনিধি বাড়বে ততোবেশি সমাজ থেকে অসঙ্গতি দূর হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট নগরীর ধোপাদিঘীর পারস্থ ইউনাইটেড কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট জেলা উত্তর শাখার প্রথম কাউন্সিল ও কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় জমিয়তের সহসভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী। তিনি বলেন- আজাদী তথা স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রসেনানী সংগঠন জমিয়ত। জমিয়তের জন্ম না হলে এই ভারতবর্ষ আজও পরাধীন থাকতো। তিনি বলেন- দেশ আজ ক্রান্তিলগ্নে, আমরা জনগণের কথা বলতে চাই। এতে দলীয় সরকারের অধীনে তা হবে না। নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
নবঘোষিত সিলেট জেলা উত্তরের আহবায়ক, কেন্দ্রীয় জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব, শায়খুল হাদীস মাওলানা আতাউর রহমান কোম্পানীগঞ্জীর সভাপতিত্বে এবং মাওলানা কবির আহমদ, মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কয়েস ও মাওলানা আশরাফ উদ্দিনের যৌথ পরিচালনায় অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব, মাওলানা নূর আহমদ কাসিমী।
কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষে বক্তব্য রাখেন- সহসভাপতি মাওলানা শায়খ আব্দুল কুদ্দুস কাসিমী, শায়খুল হাদীস মাওলানা শফিকুল সুরইঘাটী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজীজ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান কাসিমী, ঢাকা মহানগর উত্তর জমিয়তের সভাপতি মাওলানা মকবুল হোসাইন কাসিমী, কেন্দ্রীয় যুববিষয়ক সম্পাদক মাওলানা বশিরুল হাসান খাদিমানী, সিলেট মহানগর সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমান, সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফিজ মাওলানা আব্দুর রহমান সিদ্দিকী, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি নাসির উদ্দীন খান, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন, প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা মুখলিসুর রহমান রাজাগঞ্জী, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুফতি জাবের কাসিমী, মৌলভী বাজার জেলা জমিয়তের সভাপতি মাওলানা বদরুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরী।
জেলা উত্তর আওতাধীন উপজেলাগুলোর মধ্যে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা জমিয়তের পক্ষে সিনিয়র সহ সভাপতি, মাওলানা শায়খ আবদুল হাই, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জমিয়তের পক্ষে সিনিয়র সহ সভাপতি, মাওলানা শায়খ সিকন্দর আলী, কানাইঘাট উপজেলা জমিয়তের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক, মাওলানা আলতাফ হোসাইন, গোয়াইনঘাট উপজেলা জমিয়তের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, মাওলানা শায়খ নূরুল ইসলাম বৌলগ্রামী, জৈন্তাপুর উপজেলা জমিয়তের পক্ষে সভাপতি, মাওলানা কুতুব উদ্দিন। সম্মেলনে কালামে পাক থেকে তেলওয়াত করেন যুব জমিয়তের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক মাওলানা শাহিদ হাতিমী, সংগীত পরিবেশন করেন আব্দুল করিম দিলদার ও তারেক মাহমুদ। সম্মেলন শেষে মাওলানা আতাউর রহমান কোম্পানীগঞ্জকে সভাপতি, মাওলানা নূর আহমদ ক্বাসিমীকে সিনিয়র সহ সভাপতি, মাওলানা মুফতি এবাদুর রহমান ক্বাসিমীকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট তিন বছর মেয়াদী সিলেট জেলা উত্তর শাখা জমিয়তের কমিটি ঘোষণা করেন, কেন্দ্রীয় জমিয়তের সহসভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী। পরে প্রধান অতিথির জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ সভাপতি, উপমহাদেশের প্রখ্যাত শায়খুল াদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক ক্বাসিমীর মোনাজাতের মাধ্যমে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।