কাজির বাজার ডেস্ক
কারণ দর্শানোর নোটিস, বহিষ্কার, ভবিষ্যতে দলীয় পদপদবি এবং মনোনয়ন না পাওয়া, দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে কোনো নোটিস ছাড়াই দল থেকে বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্তও কাজে আসছে না। কিছুতেই বিদ্রোহী প্রার্থীদের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে ২০১৬ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দলের প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করা নেতাদের সরাসরি বহিষ্কারের ধারা অন্তর্ভুক্ত করে আওয়ামী লীগ। তবুও বিদ্রোহী প্রার্থী দমন করতে পারেনি দলটি। বাকি জীবনে আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কাজ করব না- লিখিতপত্রে কেন্দ্রে এমন ক্ষমা চেয়েও নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছেন কেউ কেউ। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমন ক্ষমা চাওয়া বিদ্রোহী প্রার্থীর নৌকা ডোবানোর কর্মকাÐে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ বিদ্রোহীদের স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে তাদের হাতে দলীয় প্রতীক নৌকা তুলে দেয়া হবে না। এমনকি দলের কোনো শাখা কমিটিতেও ঠাঁই পাবেন না ঘরের শত্রæ বিভীষণরা। এবার কোনো ফাঁকা বুলি নয়, কাজেই প্রমাণ দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী ঠেকাতে হিমশিম খেতে হয়েছে ক্ষমতাসীনদের। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলের টিকেট পেতে ব্যর্থ হলে দলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। মূলত নির্বাচনকে জমজমাট রূপ দিতে আওয়ামী লীগও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে নামকাওয়াস্তে ব্যবস্থা নেয়। ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মূল প্রতিদ্ব›দ্বী হন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। সিটি নির্বাচনও এর ব্যতিক্রম নয়। রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটের সিটি নির্বাচন নিয়ে কিছুটা নির্ভার থাকলেও বরিশাল, গাজীপুরের সিটি নির্বাচনে নিজ দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থী ও অভন্তরীণ কোন্দল নিয়ে কিছুটা হলেও বেকায়দায় আছে আওয়ামী লীগ। যারা অতীতে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছে, কিংবা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে বহিষ্কার হয়েছে তাদের দল শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা করেছে এবং একই সঙ্গে ভবিষ্যতে কোনো প্রকার সংগঠনবিরোধী কর্মকাÐে লিপ্ত হলে তা ক্ষমার অযোগ্য হবে বলে সতর্কও করা হয়েছে।
এবার আর বিদ্রোহীদের ‘ছাড়’ দেয়া হবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে দলটি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যদি কেউ বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন, দলীয় অন্তর্কোন্দলের জেরে যদি নেতাকর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেন; তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে দলটি। তাদের আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কারসহ সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায় জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আবার ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন দলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর আলম দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার পরও শেখ হাসিনা তাকে একবার সাধারণ ক্ষমা করেছেন। ক্ষমা চেয়ে আবেদনে উল্লেখ করেছিলেন, বাকি জীবনে আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কাজ করবেন না। সেটির ব্যত্যয় ঘটিয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। ফের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, এ অপরাধে জাহাঙ্গীর আলমকে শাস্তি পেতেই হবে।
এর আগে জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মূল প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন নৌকারই বিদ্রোহী প্রার্থী। প্রায় সাড়ে চার হাজারের মতো ইউনিয়ন পরিষদে সাত দফায় নির্বাচনে এক হাজার ৬৯৪টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। গত জানুয়ারিতে শেষ হওয়া ওই নির্বাচনে দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। যার অধিকাংশই হয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন, পরে দলীয়প্রধানের কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেছেন- তাদের আবেদনগুলো বিবেচনা করে ক্ষমা করেছে আওয়ামী লীগ। তবে দলীয় কোনো পদে দায়িত্ব না দেয়ার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকমান্ড। এবার ঘরের শত্রæ বিভীষণদের কোনো নির্বাচনে মনোয়ন না দেয়া, সেই সঙ্গে দলীয় এমপি যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দিয়েছেন, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন এবং নৌকার প্রার্থীকে হারাতে ভ‚মিকা রেখেছেন- তাদের উচিত শিক্ষা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। আওয়ামী লীগপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর এ ব্যাপারে আরো কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
জানতে চাইলে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যদি কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন, তবে দল তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে। এদের দলের কোনো কমিটিতে রাখা হবে না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এদের ক্ষমা করা হয়েছিল। কিন্তু এদের অনেকেই নিজেকে শোধরাননি। তাই এবার স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে। নির্বাচনের আগে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো কোনো অপরাধ মেনে নেয়া হবে না। নির্বাচনকে জমজমাট করতেও বিদ্রোহীদের ছাড় দেয়া হবে না। আগামী কোনো নির্বাচনে বিদ্রোহীদের মনোনয়ন দেয়া হবে না।