অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি

7

দেশে একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে। প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে রাজধানীর তাপমাত্রা ৫৮ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। এরই মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজধানীর ঘন ঘন অগ্নিকাÐ, বিশেষ করে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ অগ্নিকাÐ ঘটছে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক ক্যাবলের (তার) গোলযোগ থেকে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তাপমাত্রা বেশি থাকায় জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এ কারণে বেড়ে যাচ্ছে আগুনের তীব্রতা। ঘন ঘন অগ্নিকাÐের জন্য বাতাসসহ বিভিন্ন দূষণও দায়ী। এসব দূষণের ফলে পরিবেশের তাপমাত্রা বাড়ছে। ২০২১ সালে দেশে আগুনের ঘটনা ছিল ২১ হাজার ৬০১টি। এর মধ্যে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুন লাগে ৭ হাজার ৯৫৫টিÑ যা মোট অগ্নিকাÐ ঘটনার ৩৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। আর ২০২২ সালে ২৪ হাজার ১০২টি ঘটনার মধ্যে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুন লাগে ৯ হাজার ২৭৫টিÑ যা মোট আগুনের ৩৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। এক বছরে বৈদ্যুতিক গোলযোগে অগ্নিকাÐের সংখ্যা বেড়েছে। বৈদ্যুতিক গোলযোগের পরই সবচেয়ে বেশি আগুন লেগেছে বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা যত্রতত্র ফেলার কারণেÑ যা মোট আগুনের ১৬ শতাংশ। এর পরই আছে চুলা থেকে আগুনের ঘটনাÑ যা প্রায় ১৪ শতাংশ। এটি সত্যিই দুঃখজনক। বিশেষ করে আবহাওয়া উত্তপ্ত ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও কম। তাই পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ায় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন বেশি লাগছে। এ জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
অগ্নিকাÐের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ একটি শহরে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কংক্রিট ব্যবহার হয়। কিন্তু ঢাকা শহরে প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি কংক্রিট বিছানো হয়েছে। ফলে সবুজ ও পানির জলাধার কমে যাওয়ায় দিন দিন তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া নগরে অধিকাংশ ভবন কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বানানো হয়েছে। ভবন ঘেরা হচ্ছে কাচের দেওয়াল দিয়ে। দেয়ালে সাদা রঙের পরিবর্তে ব্যবহার কমে যাওয়ায় পরিবেশ উত্তপ্ত হচ্ছে। ভবনে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের সুযোগ না দিয়ে তৈরি হওয়ায় সেখানে এক ধরনের গুমোট পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ ও পানিদূষণ বেড়েছে। ফলে দিন দিন তাপমাত্রা বাড়ছে। অগ্নিকাÐ প্রতিরোধের জন্য আবাসিক ভবন, অফিস-আদালত ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে বৈদ্যুতিক তার এবং সব ধরনের ইলেকট্রিক সরঞ্জাম নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। ত্রæটি পেলে সঙ্গে সঙ্গে মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহারে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। তা হলেই অগ্নিকাÐের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।