আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ

6

স্টাফ রিপোর্টার
সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ দলের ৫ নেতা। গতকাল রবিবার সকাল থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানের কাছ থেকে তাঁরা মনোনয়নপত্র কিনেন।
দলের অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছাড়া আরও যাঁরা মনোনয়নপত্র কিনেছেন তারা হলেন- সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিসিক কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু। ঢাকায় অবস্থানরত আওয়ামীলীগের ঘনিষ্ঠ সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়- আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও আরমান আহমদ শিপলু স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মনোনয়ান ফরম সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া আসাদ উদ্দিন আহমদের পক্ষ থেকে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম তুষার, অধ্যাপক জাকির হোসেনের পক্ষ থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান সুবহান দিপন এবং আজাদুর রহমান আজাদের পক্ষ থেকে জেলা ছাত্রলীগ নেতা সালমান আহমদ ও প্রমথ রঞ্জন তালুকদার মনোনয়ানপত্র সংগ্রহ করেছেন।
জানা গেছে, গতকাল রবিবার থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে এ আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে।
লন্ডন থেকে আসার পর আরিফের সিদ্ধান্ত :
সিলেট নগরীর ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের যেমন জনপ্রিয়তা ছিল, ভোট ছিল, তেমনি কারণে আরিফ এখন জনপ্রিয়। ১০ বছরের মেয়র। নিজেই ফ্যক্টর, নিজেই ভোটব্যাংক। তবে-আরিফ এখনো খোলাসা করছেন না। লন্ডনেই আছেন। দেখা করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। কী বার্তা এলো-এখনো অজানা। নির্বাচন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত এখনই জানাচ্ছেন না। লন্ডন থেকে দেশে ফিরে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী। গতকাল সকালে তিনি জানান, ‘চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেশে আসার পর জানাবো।
সিলেটের মানুষের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনারও প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন আরিফ।’ সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২১শে জুন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগে এ নিয়ে শুরু হয়েছে মহারণ। অন্তত ৮ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে। লন্ডন থেকে এসে প্রার্থী হয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দলীয় মনোনয়ন বোর্ডে চাচ্ছেন নৌকার টিকিট। সিলেটে চলছে লাগাতার প্রস্তুতি। কিন্তু নীরব বিএনপি। সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের। দল নির্বাচনে আসবে না-এটা নিশ্চিত। নেতাকর্মীরাও বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন না। মাঠে একা কেবল আরিফই। তিনি বর্তমান মেয়র। তার সঙ্গে আছে সিলেট বিএনপিও।
আরিফ এখন সিলেট বিএনপি’র নীতি নির্ধারকদের একজন। দলীয়ভাবে মুক্তাদিরের পর বিএনপিতে কর্তৃত্ব আরিফের। এম এ হকের মৃত্যুর পর গত দু’বছরে আরও সুসংসহত হয়েছে আরিফের অবস্থান। ফলে সিলেট বিএনপি ও আরিফ এখন একই সূত্রে বাঁধা। কেউ কাউকে ছেড়ে দেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। এর বাইরে জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর ভেতরেও আরিফের অবস্থান সূদৃঢ়। ১০ বছর পর সিলেট নগরে মেয়র হিসেবে আরিফুল হক চৌধুরীর উন্নয়ন অনেকটা দৃশ্যমান হচ্ছে।
নগরীর রাস্তার আমূল পরিবর্তন, জলাশয় সংরক্ষণ, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নসহ নানা কাজে আরিফুল হক চৌধুরীর ভ‚মিকা প্রশংসিত। এতে করে মানুষের কাছে তিনি আস্থার জায়গায় রয়েছেন। তবে- সাম্প্রতিক সময়ে উন্নয়ন কর্মকাÐে সরকারের টাকা ছাড় নিয়ে ‘আক্ষেপ’ জানিয়েছেন মেয়র আরিফ।
তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানিয়েছেন- চট্রগ্রামে ৫ হাজার, রাজশাহীতে ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। সব টাকা সরকার থেকে দেয়া হয়েছে। সিলেটের জন্য গত ৫ বছরে ১২শ’ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে শর্ত দেয়া হয়েছে এই টাকার ২০ শতাংশ সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে দেয়া লাগবে। এই শর্ত মেনে গত ৫ বছরে সিটি করপোরেশন ৬-৭শ’ কোটি টাকা তুলে উন্নয়ন কাজ করিয়েছেন।
তিনি বলেন, টাকা ছাড়িয়ে আনতে হলে আগে নিজের তহবিলের টাকা দেয়া লাগে। অথচ চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর মেয়রদের সেটি করতে হয় না। তাদের শতভাগ কাজের টাকা সরকার থেকে দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি ও নেতারা সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাধিকবার সমালোচনা করেছেন। এসব সমালোচনায় তারা জানিয়েছেন, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সরকারের টাকায় উন্নয়ন করে নিজের বলে প্রচার করছেন। এছাড়া, যেসব উন্নয়ন করা হয়েছে সেগুলো অপরিকল্পিত উন্নয়ন। এসব উন্নয়নে অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ তোলেন কেউ কেউ। তবে, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, সিলেটের উন্নয়নে যে টাকা দেয়া হয়েছে অন্যান্য সিটি করপোরেশনের তুলনায় খুবই কম। কিন্তু দৃশ্যমান উন্নয়নের দিক থেকে সিলেট বেশি ফোকাসে। কারণ, সিলেটের প্রথম তারবিহীন সড়ক গোটা দেশের মডেল হয়েছে। এর বাইরে গোটা নগরে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ছড়া উদ্ধারসহ নানা কাজে প্রশংসিত হয়েছেন আরিফ। বিগত বন্যার সময় পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং সিলেটের উন্নয়ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। এসব কারণেই আরিফুল হক চৌধুরী সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী বলে দাবি করেন তারা।
এদিকে, লন্ডনে অবস্থান করা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে এখনো মুখবন্ধ। গতকাল আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সিলেটে এসে সবার সঙ্গে আলোচনা করে যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটি পরবর্তীতে মিডিয়ার মাধ্যমে সবাইকে জানাবেন। দল, পরিবার এবং নগরের মানুষের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া তিনি কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান’।