জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে শুক্রবার আয়োজিত বিশেষ অধিবেশনে ভাষণদানকালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে তোলে-এমন যে কোনো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহŸান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেছেন, গণতন্ত্রহীন অবস্থায় যে উন্নয়ন হয়, তা কখনো সর্বজনীন হতে পারে না। সে উন্নয়ন হয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকেন্দ্রিক। উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি হিসাবে জাতীয় সংসদে এটিই ছিল তার শেষ ভাষণ।
ভাষণে জাতীয় সংসদকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলে। দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকলে উন্নয়ন ও অগ্রগতি এগিয়ে যায়। আবার গণতন্ত্রের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হলে উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হয়। উন্নয়নকে স্থায়ী ও টেকসই করতে হলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মজবুত করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে আরও বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। ক্ষমতায় যাওয়া বা পরিবর্তন আনার একমাত্র উপায় নির্বাচন। আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস ও হিংসার রাজনীতি কখনো দেশ, সমাজ ও অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না; বরং তা রাজনৈতিক পরিবেশকে তমসাচ্ছন্ন করে তোলে। সংঘাত ভুলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে এসে গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে আমাদের সবার সহায়তা করা উচিত। বর্তমান বাস্তবতায় রাষ্ট্রপতির এ ভাষণ প্রাসঙ্গিক, সময়োপযোগী ও গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। বস্তুত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে সংঘাত, সহিংসতা, এমনকি সাংবিধানিক সংকট তৈরি হলে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতার পালাবদলের আশঙ্কা থাকে। তেমনটি ঘটলে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে, যা কারও কাম্য নয়। তাছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কেবল সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘিœত হবে না; অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম এবং দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ সরকারের রাজস্ব আয়ের ওপর পড়বে এর নেতিবাচক প্রভাব।
সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন উৎপাদনশীল খাত ও রপ্তানিমুখী শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হলে এসব শিল্পের ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার শ্রমিকের ভাগ্য হয়ে পড়বে অনিশ্চিত। সবচেয়ে বড় কথা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম না হলে বিনিয়োগ ও উন্নয়নে আসবে না কাক্সিক্ষত সাফল্য। দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা গেলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সঠিক দিকনির্দেশনা পাবে, যা সুন্দর আগামী বিনির্মাণে সহায়ক হবে। কাজটি যে খুব কঠিন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে কঠিন হলেও এক্ষেত্রে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে রাজনীতিকসহ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণও জরুরি।
দুঃখজনক হলো, রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক শত্রæতায় পর্যবসিত হওয়ায় গণতন্ত্র ও উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় হলো, পারস্পরিক সহনশীলতা, সমঝোতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা। দেশে সমঝোতার রাজনীতি, সহনশীল আচরণ ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরিচ্ছন্ন ও রুচিশীল মন-মানসিকতা নিয়ে রাজনীতিকরা এগিয়ে আসবেন, এটাই প্রত্যাশা।