স্টাফ রিপোর্টার :
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মতো কর্মঠ লোক খুব কম দেখেছেন বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় নগরীর আবুল মাল আব্দুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর উদ্যোগে ৫ হাজার মহিলার মধ্যে শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আশফাক আহমদের সভাপতিত্বে ও অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারণে আজকে প্রত্যেকের জীবন মানের অবস্থা আগের থেকে ভালো হয়েছে। শেখ হাসিনা জনগণের বন্ধু, গরীবের বন্ধু, ব্যবসায়ীর বন্ধু। পৃথিবীতে যুদ্ধ চলছে। সেই যুদ্ধ এবং এরআগে কোভিড কারণে বড় কষ্ট হয়েছে। জিনিপত্রের দাম বেড়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গরীব ও স্বল্প আয়ের মানুষের কথা স্মরণ করে দেড় কোটি লোকের কাছে স্বস্তা দামে খাবার ও বিভিন্ন খাবারের উপাদান ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সরকার বিভিন্ন ভাতা অনুদান প্রদান করছে। শুধু তাই নয় মানুষ মাথা গোঁজার জন্য ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। আর কোনো নেতা এসব করেনি। মেট্রোরেল বাদ দিলাম, পাতাল সুরঙ্গ বাদ দিলাম, পদ্মা সেতু বাদ দিলাম। জনগণের মঙ্গলে শেখ হাসিনা সব সময় অগ্রসর। তিনি বলেন, আমাকে সিলেটের প্রতিনিধি করায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ তুলে ধরেছি। আল্লাহ মেহেরবান আমাদের দাবি দাওয়া প্রধানমন্ত্রী সেগুলো গ্রহণ করেছেন। এখন আমাদের ছয় লেন হচ্ছে। হাসপাতালের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এখানে মুহিব কমপ্লেক্স হয়েছে।
সিলেট শহরে অনেক অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। যদিও বিএনপির নেতা এখানে মেয়র। কিন্তু দেশের উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনা কোনো দল দেখেন না। সিলেটে বিএনপির মেয়র থাকা সত্ত্বেও তাকে প্রধানমন্ত্রী সাহায্য দিচ্ছেন, টাকা দিচ্ছেন ও প্রজেক্ট দিচ্ছেন যাতে তিনি কাজ করেন দেশের মঙ্গল করেন। তাই আরিফুল হক অনেক কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। শেখ হাসিনা টাকা অনুমোদন দিচ্ছেন বলে মেয়র অনেক কাজ করেছেন।
আর এই শহর আমার। সুতরাং আরিফ সাহেব কাজ করলে আমিও তার সাথে এক। কাজ করেন শেখ হাসিনার সরকার দেশের মঙ্গল চায়, দেশের উন্নয়ন চায়। উন্নয়ন চাওয়ার ফলে দেশের পরিবর্তন হয়েছে একইভাবে বিদেশীরা বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে।
মন্ত্রী নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ১ বছরের কম সময় রয়েছে জাতীয় নির্বাচনের। এই সিলেটকে আমরা আদর্শ নগরী করতে চাই। ডিজিটাল সিলেটের কাজ শুরু করেছিলাম কাজ সম্পন্ন হয় নাই। আমি চাই সিলেট শহর একটি দৃষ্টি নন্দিন শহর হোক।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমার পাশে যিনি আছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে তাঁর নিজ উদ্যোগে বিরাট আয়োজন করেছেন। আপনাদের জন্য কিছু সাহায্যের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি লন্ডনে বহুদিন ছিলেন। তাঁর মতো কর্মঠ লোক আমি খুব কম দেখেছি। এই ধরণের ভালো অর্গানাইজার আমি খুব কম দেখেছি। প্রধানমন্ত্রী তাকে বলে দিয়েছেন এলাকায় গিয়ে কাজ করতে। মন্ত্রী বলেন আরও নেতৃবৃন্দ আছেন তাঁরা এখনো ক্যান্ডিডেট। তবে, ইন্নাশাল্লাহ আনোয়ারুজ্জামানের কর্মক্ষমতা ও জনগন যদি চান আর তিনি যদি নগর পিতা হোন আমি আশ্বাস দিতে পারি আনোয়ারুজ্জামান কাজ করতে জানেন। সুতরাং সেটা বিবেচনা করবেন। যারা দেশের কল্যাণে কাজ করে, জনগণের কথা চিন্তা করে আগামী বছরের নির্বাচনে সে কথা বিবেচনা করে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট নিজাম উদ্দিন পিপি, সহ-সভাপতি ড. আহমদ আল কবির, এডভোকেট রাজ উদ্দিন, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিজিত চৌধুরী, সহ-সভাপতি জগদীশ চন্দ্র দাশ, যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রনজিত সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মবশ্বির আলী, ইফতেখার হোসেন পিয়ার, জগলু চৌধুরী যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডেইজি সারোয়ার, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক তপন মিত্র, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদাল মিয়া, মহানগর আওয়ামী লীগে সদস্য ও সিলেট চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহানা বেগম, সাধারণ সম্পাদক আসমা কামরান, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মো: শাহজাহান আহমদ, জুমাদিন আহমদ, জেলা যুবলীগের সভাপতি ও ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আহমদ ভিপি, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামিম আহমদ, মহানগর যুবলীগর সভাপতি আলম খান মুক্তি, সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার, সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য সুসমা সুলতানা, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ প্রমুখ।
এদিকে, বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনাগুলোর সঙ্গে আমেরিকা কাজ করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) শিক্ষার্থীদের অরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন ড. মোমেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা খুব ভাগ্যবান যে, অনেক দেশের নামজাদা কূটনীতিকরা এসেছেন। আপনি (সাংবাদিক) আমেরিকার কথা বলছেন, আমেরিকার সাতজন অত্যন্ত সিনিয়র কূটনীতিক এসেছেন এবং আমাদের মধ্যে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। ওঁরা এসেছেন আমাদের সাথে তাঁদের দেশের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করার জন্য। যতো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি আছে, সব দূর করে অত্যন্ত শক্ত ভিত্তির ওপর আমাদের উভয় দেশের, আমেরিকা এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক।
কোভিড-১৯ এর সময়কার সফলতার প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশকে ‘মিরাকল’ দেশ হিসেবে উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, এই মিরাকল দেশের সাথে তাঁরা (আমেরিকানরা) সুসম্পর্ক রাখতে চান। আর এখানে নতুন নতুন যে সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, সেগুলোর সাথে তাঁরা সম্পৃক্ত হতে চান, সেজন্য এসেছেন। তা ছাড়া এসেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষ দূত। তিনিও বলেছেন যে, বাংলাদেশ সবচেয়ে উন্নয়নশীল মানে র্যাপিডলি ডেভলপিং কান্ট্রি। আর এখানে বহু ধরনের সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো তাঁরা যাতে একসাথে কাজ করতে পারেন, সেজন্য তিনিও এসেছেন। আর এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব, একই বার্তা নিয়ে যে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার জন্য। সবাই এসে আমাদের প্রশংসা করেছেন আর আমাদের দেশে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন এবং আমরা খুব খুশি।
মন্ত্রী আরও বলেন, গত কয়েক মাস দেখেছেন, আমেরিকানরা কন্টিনিউয়াসলি একজনের পর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি আসছেন সম্পর্ক উন্নয়ন করার জন্য। শুধু সেটা না, আমাদের দাওয়াতও দিয়েছেন তাঁদের দেশে গিয়ে তাঁদের নেতাদের সাথে আলাপ করার জন্য। সো, উই আর ডেভলপিং ভেরি গুড রিলেশন্সশিপ এবং আই মাস্ট সে ইট ইজ সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তার জন্যে। আর সুদূরপ্রসারী, এই যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের যে ফরেন পলিসি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়…আমরা কারো শত্রু নই। আমরা বাস্তববাদী ফরেন পলিসি চালু রেখেছি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গারা সবগুলো ফেরত যাবে বলে মনে হয় না, বাস্তববাদী যদি হোন, তো তাঁদেরকে (বিদেশিদের) বলেছি, কিছু আপনারা নেন না কেন? তো তাঁরা নেওয়া শুরু করেছেন। তাঁরা আরো নেবেন, আমেরিকা নেবেন, কানাডা নেবেন..অন্যান্য দেশকেও আমরা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। আমাদের এক নম্বর টার্গেট, আমরা চাই রোহিঙ্গারা তাঁদের দেশে ফিরে যাক। আমেরিকানরা আমাদেরকে এই ব্যাপারে সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন।
সিকৃবির অনুষ্ঠানে ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা, রেজিস্ট্রার বদরুল ইসলাম শোয়েব, আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।