কাজিরবাজার ডেস্ক :
১৯৬১ সালের পর প্রথমবারের মতো চীনের জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। গত ছয় দশকে জনসংখ্যার নিম্নহারের কথা জানালো বেইজিং। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা এটি। ধারণা করা হচ্ছে, চীনের জনসংখ্যা কমার প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে।
প্রায় ১৪০ কোটির জনসংখ্যার দেশটির শ্রমশক্তির জন্য বড় আঘাত এটি। কেননা একদিকে, বয়স্কদের সংখ্যা বেড়েছে, অপরদিকে জন্মহার কমেছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করতে পারে এই জটিলতা।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) জানায়, ২০২২ সালের শেষে দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার কমে ১৪১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজারে নেমেছে। এনবিএস আরও জানায়, এই সময়ে জন্ম হয়েছে ৯ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন বা ৯৫ লাখের বেশি শিশুর এবং মৃত্যুর সংখ্যা ১০ দশমিক ৪১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৪ লাখের বেশি।
১৯৬১ সালের পর চীনের জনসংখ্যার প্রথম হ্রাস হওয়াকে চিহ্নিত করছে এই সংখ্যা। সে সময় দেশটি মাও সেতুং-এর বিপর্যয়কর কৃষি নীতির কারণে তার আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বা দুর্ভিক্ষের সঙ্গে লড়াই করছিল। যেটি গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড নামেও পরিচিত।
চীন দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, তবে শিগগির ভারত চীনকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতের জনসংখ্যা এখন ১৪০ কোটির বেশি।
এনবিএসের প্রধান কাং ই বলেছেন, চীনের জনসংখ্যা হ্রাস নিয়ে জনগণের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয় কারণ দেশের সামগ্রিক শ্রম সরবরাহ এখনও চাহিদার চেয়েও বেশি।
জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষায় যদিও চীন ২০১৬ সালে তার কঠোর ‘এক-সন্তান নীতি’ থেকে সরে এসেছে। ২০২১ সালে তিন সন্তান নেওয়ার অনুমতিও দিয়েছে দেশটি।
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা ধারণা দিয়েছেন, দীর্ঘ মেয়াদে ২০৫০ সাল পর্যন্ত চীনের জনসংখ্যা ১০ কোটি ৯০ লাখের মতো কমতে পারে। ২০১৯ সালের পূর্বাভাসের চেয়ে জনসংখ্যা হ্রাসের এ সংখ্যা তিন গুণেরও বেশি।
আল জাজিরার সাংবাদিক ক্যাটরিনা ইউ বেইজিং থেকে জানান, ‘জনসংখ্যাগত সংকট’ এড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে চীন সরকার। যার মধ্যে এক-সন্তান নীতি বাদ দেওয়া এবং পিতামাতার ছুটি বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রণোদনার বিষয়টিও রয়েছে। তবে এ ধরনের প্রচেষ্টা কাজ করবে বলে মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি পরিসংখ্যানগুলো আরও গভীরভাবে বিবেচনা করি তবে দেখা যায় চীনের জন্মহার ছিল প্রতি ১ হাজার জনে
৬ দশমিক ৭৭ এবং মৃত্যুর হার এটির চেয়ে সর্বোচ্চে পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৩ বছর ধরে চলা কোভিড নীতি জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তাছাড়া, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়, কর্মজীবী নারীদের সন্তান নিতে অনীহা প্রকাশসহ আরও নানাবিধ কারণে কমছে দেশটির জনসংখ্যা।